‘রৌমারী অঞ্চলের মানুষের জন্য নদীভাঙন দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ’

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নদীভাঙন মোকাবিলায় লোকায়ত পদ্ধতি ও কমিউনিটির অংশগ্রহণকে স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির অর্থায়নে, অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহযোগিতায়, আরডিআরএস বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত ট্রোসা-২ প্রকল্প এ সংলাপ আয়োজন করে।
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার।
সভায় বক্তারা বলেন, নদীভাঙন রৌমারী অঞ্চলের মানুষের জন্য দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ। নদীভাঙন রোধে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি লোকায়ত পদ্ধতির কার্যকর ব্যবহার ও স্থানীয় কমিউনিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় সরকার পরিকল্পনায় এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান পাওয়া সম্ভব।
সংলাপে স্থানীয় ও নদী তীরবর্তী এলাকার জনগণের অভিজ্ঞতা ও বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়।
নদী তীরবর্তী এলাকার জনগণ জানান, ভাঙনকবলিত মানুষের জীবিকার নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হলে স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনায় সরাসরি কমিউনিটির মতামত ও অংশগ্রহণ থাকা অপরিহার্য।
ট্রোসা-২ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা খায়রন্নেসা সরকার সংলাপের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, বাঁশের বান্ডাল একটি পরিবেশবান্ধব, কম খরচের লোকায়ত পদ্ধতি। স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনায় এই পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করলে ও কমিউনিটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে নদীভাঙন মোকাবিলায় কমিউনিটির সক্ষমতা বাড়বে এবং জীবিকায়নে স্থিতিশীলতা আসবে।
যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, স্থানীয়রা বছরের পর বছর বান্ডাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছে। সরকার যদি এ প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে তাহলে আমরা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারব।
বন্দবেড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, নদীভাঙন কেবল ভৌত কাঠামো নয়, মানুষের স্বপ্নকেও ভেঙে দেয়। তাই সরকার ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করলে সমাধান সম্ভব।
রৌমারী থানার ওসি বলেন, নদীভাঙনের কারণে অনেক মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ভাঙনকবলিত অঞ্চলের মানুষের জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই নদীভাঙন রোধে কৃষি ও পরিবেশবান্ধব লোকায়ত পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা জরুরি।
ইউএনও তার বক্তব্যে বলেন, নদীভাঙন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যা সমাধানে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রয়োজন। লোকায়ত পদ্ধতি ও স্থানীয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা অনেক সহজ হবে।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মহিম আল মোস্তাকুর, রৌমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল, সহকারী অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা, রৌমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আক্তারুজ্জামান, নদী সংগঠক মহীউদ্দিন মহির প্রমুখ।