শেখ হাসিনার জন্মদিন ঘিরে দেশকে অস্থিতিশীল করার ছক আ.লীগের

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া এবং শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগের পালিয়ে যাওয়ার পর সংগঠনিকভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে দলটি। তবে এবার রাজপথে নেমে ‘মুক্তির ডাক’ তুলে দেশকে অস্থিতিশীল করার ছক কষছে দলটি।
পলাতক প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব মিছিল দলটির শীর্ষ নেতাদের মুক্তি এবং রাজনৈতিক পুনর্বহালের দাবি তোলা হবে বলে একাধিক সূত্র জানায়। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেছেন, শেখ হাসিনার জন্মদিনে এটাই হবে সবচেয়ে ‘বড় উপহার’।
জানা গেছে, সারাদেশে একযোগে জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় শহর ও রাজধানী ঢাকায় বড় পরিসরে মিছিলের ছক এঁকেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশে ও বিদেশে থাকা দায়িত্বশীল নেতারা সহযোগিতা করবে। এতে সমন্বয় করছেন গাজীপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ঢাকার কিছু দায়িত্বশীল নেতা।
এছাড়া রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখের ৭ থেকে ৮ স্থানে বড় পরিসরে মিছিল বা জমায়েত করে শোডাউন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কর্মসূচি পালনে এমন স্থান বেছে নেওয়া হবে যাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সহজে গ্রেফতার এড়াতে পারে। এক্ষেত্রে গত কয়েক দিনের ছোট ছোট ঝটিকা মিছিলকে ‘রিহার্সেল’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই ভারতের কলকাতার ডি কে ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সংগঠন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোস্তফা জামান পপি পলাতক যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াস সদস্য শেখ সেলিমের অনুমতি সাপেক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়।
শেখ সেলিমও বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছেন। তিনি ঢাকার অধিকাংশ মিছিল মিছিল বাস্তবায়ন করছেন গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে।
রাজধানীতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলিস্তান এলাকায় ঝটিকা মিছিলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই ফার্মগেট, গুলিস্তান, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে ঝটিকা মিছিল হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিসাবে গত পাঁচ দিনে রাজধানীতে অন্তত ১২টি বড় ও মাঝারি মিছিল হয়েছে, যেখানে অংশ নিয়েছে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
সর্বশেষ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, ডিবি এবং থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ১৪টি ককটেল উদ্ধার ও সাতটি ব্যানার জব্দ করা হয়। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলের চেষ্টাকালে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা কোন এলাকার নেতাকর্মী জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তবে প্রাথমিকভাবে বলা যেতে পারে গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশ ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে এসেছে।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, গত সপ্তাহ থেকে বুধবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের তিন শতাধিক সক্রিয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল ও কিশোরগঞ্জে ছোটখাটো মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আরও কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় পুলিশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার জন্মদিন ঘিরে এবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হবে। কর্মসূচির মূল ফোকাস থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবি। এই কর্মসূচি দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করেছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করা হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ২৮ সেপ্টেম্বর (রোববার) শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিছিল বের করার কথা থাকলেও কৌশলগত কারণে তা ২৬ বা ২৭ সেপ্টেম্বরও (শুক্রবার বা শনিবার) হতে পারে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে কমপক্ষে ১০ হাজার লোকের আয়োজন করা হবে। মিছিলে বাধা আসলে সংঘর্ষে লিপ্ত হতেও প্রস্তুতি থাকবে মিছিলকারীদের।
এসব বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন নজরুল এনটিভিকে আরও বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত। ঢাকার মধ্যে ডিএমপির টহল নিয়মিত চলছে। যদি তারা (আওয়ামী লীগ) ঝটিকা মিছিলসহ কোনো প্রকার কর্মকাণ্ড করে এবং আমরা খবর পাই, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন সামনে দুর্গাপূজা আসছে। পূজা উপলক্ষেও আমাদের অতিরিক্ত ফোর্স প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি আওয়ামী লীগের কেউ মাঠে নামলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝটিকা মিছিলের ভিডিও দেখে দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জানিয়ে এস এন নজরুল আরও বলেন, এখন মিছিলের পরপরই ভিডিওগুলো চলে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখান থেকে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তার করা সহজ। ভিডিও দেখে দেখে সনাক্তও করা যায়।