নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় ৪০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি

২০২৪ সালের বন্যার পর চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রাথমিক হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে।
সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লাখো মানুষ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষতির হিসেব চূড়ান্ত করে সড়কগুলো মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে এলজিইডির বেশিরভাগ সড়কে কোথাও সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের, কোথাও সড়কের সাইড ভেঙে পাশের জলাশয় বা ক্ষেতের মধ্যে পড়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় অনেক সড়কের অনেকাংশ এখনো কাদা-মাটি ও পানিতে মাখামাখি।
এসব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে মালবাহী ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাসসহ ছোট-বড় অনেক যানবাহন। সড়কে গর্ত থাকায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা যানবাহন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কোমর ব্যথাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় পড়ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে খানা-খন্দে ভরা এসব সড়কগুলো মেরামত ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সদর উপজেলার ওদারহাট এলাকার বাসিন্দা মুন্নি আক্তার জানান, জেলা শহর মাইজদীতে চাকরি করার সুবাদে প্রতিদিন তাকে এই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু পানি নামার পরও এখন গর্তের কারণে তার শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট এলাকার বাসিন্দা মহি উদ্দিন লিটন বলেন, গত বছর বন্যার পর এক বছরে তেমন কাজ না হওয়ায় এ বছর রাস্তাটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। সড়কটি বর্তমানে চলাচলের একবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও এলজিইডির তথ্যমতে, দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় জেলার ৯টি উপজেলার একাধিক সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর উপজেলার উদয়সাধুরহাট-করমুল্যা সড়কের ২১ কিলোমিটার এবং কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট-গুল্লাখালি-মৌলভী বাজার সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার।
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে- সদর উপজেলার ওদারহাট-সফিগঞ্জ বাজার সড়ক, সুবর্ণচর উপজেলার আটকপালিয়া-হালিম বাজার-বগার বাজার সড়ক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বামনি কলেজ-বাঞ্চারাম বাজার সড়ক, হাতিয়া উপজেলার ডিসি সড়ক-ওয়াপদা সড়ক এবং সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া-তেমুহনী সড়ক।
এলজিইডি বলছে, জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের সার্ফেস, পেভমেন্ট, সোল্ডার, ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন লেয়ারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর, কবিরহাট, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়।
সড়কগুলো মেরামতের বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মাহফুজুল হোসাইন বলেন, জলাবদ্ধতা স্থায়ী হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতির উপজেলা ভিত্তিক তালিকা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দ্রুতভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি সড়কের মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।