প্রশাসনে স্বৈরাচারের দোসর রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না : মেজর (অব.) হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘প্রশাসনে এখনও স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। এদের রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের উদ্যোগে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘বাংলাদেশ যে এখনও নির্বাচনি ম্যাপের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না, তার একটি কারণ—বর্তমান প্রশাসনে এখানও স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। এদেরকে সরানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই এবং এরা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছি, আজকে আবারও জানাব—নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। আমরা স্বৈরাচারের দোসরদেরকে মাঠে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না।’
নির্বাচন বানচালকারীদের বিএনপি রাজপথেই প্রতিরোধ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘যারা বলছে, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমরা তাদেরকে বলতে চাই, বিএনপি কোনো দুর্বল দল নয়। কারা নির্বাচন হতে দেবে না, আমরা রাজপথে দেখতে চাই। ১৭ বছরের আত্মত্যাগ তো ব্যর্থ হতে পারে না।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আজ আমরা বাংলাদেশের সবাইকে—সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগসহ সবাইকে মেসেজ দিতে চাই, জিয়াউর রহমান আজ নেই কিন্তু তার দল বিএনপি এখনও বেঁচে আছে। ইনশাল্লাহ ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন হবে।’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে না। এদেশের জনগণের এটা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। যারা পিআর নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদেরকে বলব, আপনারা জনগণের কাছে যান। আপনাদের ম্যানিফেস্টোতে বলেন, ইশতেহারে বলেন, আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাই। এই দেশে জনগণ যদি আপনাদেরকে সংখ্যাগিষ্ঠতা দেয় তাহলে আপনারা এই ব্যবস্থা চালু করেন। আমরা মাথা পেতে নেব।’
বিএনপিনেতা মেজর (অব.) হাফিজ আরও বলেন, ‘এভাবে জনগণের ওপরে দুই-তিনটি রাজনৈতিক দল, ইউরোপ আমেরিকা থেকে আগত বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই ধরনের সিস্টেম করতে যাওয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। আমরা দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি কখনোই এটিকে সহ্য করব না। এভাবে জনগণের ওপর অত্যাচার করে নিজেদের স্বার্থে, নিজস্ব দলীয় স্বার্থে অদ্ভুত নির্বাচনি ব্যবস্থা, যার সঙ্গে আমাদের দেশের জনগণ পরিচিত নয়, এই ব্যবস্থা আমরা চালু হতে দিতে পারি না।’
এনসিপিকে আওয়ামী লীগের রোগে ধরেছে উল্লেখ করে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘এনসিপিকেও আওয়ামী লীগের ওই রোগে ধরেছে। আওয়ামী লীগ যেমন ক্লেইম করে বাংলাদেশ তারাই স্বাধীন করেছে। এনসিপি এই সদ্য সাবালক ছাত্ররা তারাও বলতে চায়, শেখ হাসিনা সরকারের নাকি তারাই পতন ঘটিয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপির ৫৮৮ জন সদস্য ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের দেড় মাসের সংগ্রামে জীবন দিয়েছে। এখন তারা মনে করে—তারাই (এনসিপি) হলো এই রাষ্ট্রের কর্ণধার, তাদের এই দায়িত্ব এই দেশকে ঠিক করার। কিছুদিন আগে ডাকসু নির্বাচন হলো, এই এনসিপির তো সবাই ছাত্র, তারা ছাত্রদের প্রতিনিধি বলে দাবি করত, অথচ তারা একশ ভোট পায়নি। তারা এখন বলতে চায়, পিআর না হলে নির্বাচনই হতে দেবে না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আবার শুরু হয়েছে পুরানো খেলা। সেখানে ভারতীয় পতাকা উঠতো বহু বছর আগে থেকেই। কেবল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেখানে বাঙালিদের পাহাড়ি এলাকায় পুনর্বাসিত করার পর সেখানে জনসংখ্যার মধ্যে একটা ব্যালেন্স এসেছে। যার জন্য এখন আর তারা ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারছে না।’
মেজর (অব.) হাফিজ আরও বলেন, ‘এজন্য শহীদ জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি বাংলাদেশের অখণ্ডতাকে রক্ষা করেছেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পতাকাকে সবসময় উড্ডীন রেখেছেন।’
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।