কোটালীপাড়ায় চলছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌকা বাইচ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌকা বাইচ। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ‘বিল বাঘিয়ার নৌকা বাইচ’ নামে পরিচিত এ আয়োজন ঘিরে এলাকাজুড়ে নেমেছে উৎসবের আমেজ।
প্রতি বছরের মতো এবারও নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে কালিগঞ্জ এলাকায় বসেছে হাজারো মানুষের মিলনমেলা। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ নান্দনিক নৌকা বাইচ চলবে আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত।
প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এ নৌকা বাইচে অংশ নিয়েছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা ও জয়নগর বাচারী নৌকা।
উপজেলার বাবুর খালে কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলে এই প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি নৌকায় নৌকায় মেলার আয়োজনও ছিল বাড়তি আকর্ষণ। দুপুর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বাইচের প্রতিটি পর্ব। নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ উৎসবের আমেজে উপভোগ করেন বাইচের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
ঠিকারি ও কাঁশির বাদ্যের সঙ্গে জারি-সারি গানের তালে ‘হেঁইও হেঁইও’ রবে বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে সৃষ্টি হয় এক অনবদ্য আবহ। দর্শকদের করতালি ও উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
কলাবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, জলাভূমি বেষ্টিত কোটালীপাড়ার মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌকা। প্রায় দুই শত বছর আগে লক্ষ্মীপূজার সময় এলাকার মানুষ জমিদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন। ফেরার পথে নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতা করতেন। সেখান থেকেই নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু হয়।
ধারাবাশাইল আদর্শ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মিন্টু রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে এই নৌকা বাইচ দেখে আসছি। এখানে কখনও কাউকে বিশেষ দায়িত্ব নিতে হয় না- স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষ এই আয়োজন করে।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সেন কংকন বলেন, জীবনে অনেক স্থানের নৌকা বাইচ দেখেছি, কিন্তু এখানকার মতো এত বড়, বর্ণিল ও রাজকীয় নৌকা বাইচ দেশের আর কোথাও দেখিনি।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, বাঘিয়ার বিলের এই নৌকা বাইচ কোটালীপাড়ার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গোপালগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এ আয়োজন উপভোগ করতে আসে। এ কারণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন করা হয়েছে।