ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮ কোটি টাকার সড়ক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে লাউর ফতেহপুর বাশারুক বাজার থেকে বিটঘর পর্যন্ত প্রায় ৩.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রস্থের এই পিচঢালা সড়কে চারটি সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ইটের বদলে সাধারণ মাটি ফেলা হয়েছে, ফলে পাকা হওয়ার আগেই সড়কের কিছু অংশ বসে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই সড়ক নির্মাণের কাজ তাদের হতাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজটি নিয়েছে। মান বজায় রাখার চেয়ে দ্রুত বিল তোলাতেই তাদের বেশি আগ্রহ।
লাউর ফতেহপুর এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তারা যে ইট দিয়েছে, সব দুই নম্বর। অনেক জায়গায় তো ইটই দেয়নি। এই কাজের মান যদি তদন্ত হয়, সব বেরিয়ে যাবে। আমরা চাই সরকারি তদন্ত হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, ‘আমাদের বলা হয় বেশি বালু দিও, ইট কম দাও। অনেক জায়গায় মাটি দিয়েই ভরাট করতে হয়। যারা তদারকি করতে আসে, তাদের আগেই ম্যানেজ করা থাকে।’
লাউর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথম দিকে কাজের মান খুব খারাপ ছিল। আমরা চাপ না দিলে ঠিকাদার যেমন খুশি তেমনভাবে কাজ শেষ করে দিত। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এখনও সন্তোষজনক নয়।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুসেন ব্রাদার্সের সাইট ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ চলছে। যারা অভিযোগ করছে, তারা হয়তো প্রকল্পের অগ্রগতি বুঝতে পারছে না।
এলজিইডির নবীনগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন বলেন, আমি বর্তমানে সরকারি কাজে নবীনগরের বাইরে আছি। আগামী সপ্তাহে ফিরে গিয়ে কাজটি পরিদর্শন করব। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী বলেন, বিষয়টি এখন জানতে পারলাম। প্রয়োজনে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসককে অবগত করা হবে। আমরা চাই গুণগত মান বজায় রেখে কাজ শেষ হোক, যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়।