‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে ইসির চিঠির জবাবে যা বলল এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাওয়া ‘শাপলা’ প্রতীক প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জবাব দিয়েছে দলটি। গত ১৩ অক্টোবর এনসিপিকে চিঠি দিয়েছিল ইসি। পরদিন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এনসিপির চাওয়া ‘শাপলা’ প্রতীকের বিষয়ে ইসির অবস্থান একই। এনসিপিকে চিঠি দিয়েছি। ১৯ অক্টোবরের ভেতর ওনারা প্রতীক বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে আইনানুযায়ী ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। ইসি মনে করে, শাপলাকে প্রতীকে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার নাই।
আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) ইসির চিঠির জবাব দিয়েছে এনসিপি। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত এনসিপির জবাব নিচে তুলে ধরা হলো—
গত ২২ জুন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন দাখিল করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়। এই আবেদন দাখিলের আগে এবং পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধিদল ধারাবাহিকভাবে দফায় দফায় বৈঠকে মিলিত হয়েছে এবং শাপলা প্রতীকের ব্যাপারে দলের অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
আলোচনার অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় এনসিপি গত ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন বরাবর আলাদা আলাদা দরখাস্ত দাখিল করেছে এবং পার্টির অনুকূলে প্রতীক ১. শাপলা ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়াও শাপলাকে প্রতীক হিসেবে দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বা আংশিক ডিসটর্টেট ভার্সন গ্রহণ করা, এমনকি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ভার্সনে আঁকা শাপলার নমুনা ছবি নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে।
কিন্তু এনসিপির পাঠানো দরখাস্তগুলো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে নির্বাচন কমিশন বিধি-বহির্ভূতভাবে চিঠি প্রেরণ করে এনসিপিকে স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রার্থিত প্রতীকের বাইরে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে, যা অনাকাঙ্খিত, স্বেচ্ছাচারী এবং বেআইনি।
নির্বাচন কমিশনের আইনগত দায়িত্ব সম্পর্কে এনসিপির অবস্থান—
১। প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার মানদণ্ড প্রকাশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা :
এনসিপি লক্ষ্য করেছে যে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত নীতিমালা, নির্দেশিকা বা মানদণ্ড প্রকাশ করেনি, যার ভিত্তিতে প্রতীক তালিকায় কোনো প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করা বা বাদ দেওয়া হয়।
সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সকল নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের প্রতি সমতা এবং আইনের আশ্রয়ে ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব থেকে কমিশন অব্যাহতি পেতে পারে না।
অতএব, নির্বাচন কমিশন অনুগ্রহপূর্বক লিখিতভাবে জানাবে কোন নীতিমালা, নির্দেশিকা বা মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীকটি তালিকাভুক্ত প্রতীকের বাইরে রাখা হয়েছে। যদি এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা বিদ্যমান থাকে, তবে তা প্রকাশ করা ও সকল দলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য করা আবশ্যক।
২। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ -এর বিধি ৭(২) ও ফরম ২ অনুসরণের বাধ্যবাধকতা :
এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে যেতে হলে নির্বাচন কমিশনকে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮’ এর বিধি ৭(২) এর বিধান অনুযায়ী দুইটি দৈনিক পত্রিকায় উক্ত বিধিমালার তফসিলে বিবৃত ফরম-২ বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। উল্লেখ্য উক্ত বিধিমালার ফরম-২ এ রাজনৈতিক দলের তরফে প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং কমিশনের তরফে এর ব্যত্যয় করা বা নিজের ইচ্ছামতো প্রতীককে রাজনৈতিক দলের প্রার্থিত প্রতীক হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। অতএব, নির্বাচন কমিশন যদি ২০০৮ সালের বিধিমালার বিধান অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই এনসিপির প্রার্থিত প্রতীক ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীকের নাম উল্লেখ করতে হবে।
এনসিপির দাবিসমূহ—
ক) নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করবে— প্রতীক অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের বিদ্যমান নীতিমালা বা মানদণ্ড কী এবং কোন আইনি ভিত্তিতে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীককে বর্তমান তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
খ) যদি এমন কোনো মানদণ্ড এখনও প্রণয়ন না করা হয়ে থাকে, তবে নির্বাচন কমিশনকে তা অবিলম্বে প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
গ) নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের বিধিমালার ফরম-২ অনুসারে এনসিপির প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
ঘ) কমিশন প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে যুক্তিসংগত, স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করবে।
এনসিপি আবারও স্পষ্ট করছে যে, গণমানুষের সাথে শাপলা প্রতীক-কেন্দ্রিক এনসিপির যে গভীর আত্মিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, দেশের মানুষের সেই ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার শক্তি তার নাই। ফলশ্রুতিতে শাপলা ব্যতীত নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছাচারী আচরণের মাধ্যমে প্রেরিত ১৩ অক্টোম্বর ২০২৫ তারিখের হুমকিমূলক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেধে দেওয়া তালিকা থেকে অন্য কোনো প্রতীক পছন্দ করা এনসিপির জন্য সম্ভবপর নয়।
এনসিপি মনে করে, প্রতীক ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন এনসিপি র সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করছে। যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচন কমিশন জনগণের সঙ্গে তার স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার সম্পর্ককে এড়িয়ে গিয়ে নিজের খেয়াল-খুশি মতো এলোমেলোভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিবাদী আমলের পাতানো নির্বাচন আয়োজনকারী কমিশনের থেকে নিজের কার্যক্রমকে আলাদা করতে পারছে না এবং দেশবাসীকে আবারও একটি সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এনসিপির প্রতি নির্বাচন কমিশনের বৈরী আচরণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সদিচ্ছা, সক্ষমতা ও আন্তরিকতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বরাবর এনসিপির দাখিলকৃত গত ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ৭ অক্টোবরের আলাদা আলাদা দরখাস্ত নিষ্পত্তি করে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে তার কার্যক্রমের আইনানুগ ভিত্তি ও স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে এবং গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
সার্বিক বিবেচনায় এনসিপি আশা করে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯(১) সংশোধনক্রমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনুকূলে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা এবং ৩. লাল শাপলা থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে।