ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শঙ্কা নেই : ইসি সচিব
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের (বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান) ভেতরে উদ্বেগ দেখিনি, বরং এটা দেখেছি—তারা একটি ভালো ইলেকশনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবশ্যই নির্বাচন করার মতো পরিবেশ আছে এবং সেটাই আরও সুসংহত করার জন্যই আজকের আলোচনা এবং এটা চলমান থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতি কিংবা পরবর্তীতে ভোটের সময় কোনো শঙ্কা তারা প্রকাশ করেননি।’
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সশস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিমিয় সভা করেছে ইসি। সভা শেষে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
আখতার আহমেদ বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আমরা প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী, আনসার ও কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সঙ্গে আমরা আজ মতবিনিময় করেছি। ভোটকেন্দ্র, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত হিসাব, নিরাপত্তা, নির্বাচনি এলাকা, তথা সমগ্র দেশের নিরাপত্তা এবং সম্পর্কে একটা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
ইসির এই সিনিয়র সচিব বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সীমা তফসিল ঘোষণা থেকে আমাদের এখতিয়ারাধীন হচ্ছে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে যারা কাজ করছেন মাঠ পর্যায়ে এবং করবেন, তাদের ভেতরে একটা সমন্বয় দরকার। তারপরে অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ, এআই প্রযুক্তির ব্যবহারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব তথ্য আসে, সেগুলো অপব্যবহার রোধ করা, বিদেশি সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, যে পর্যবেক্ষণ সংস্থা যেগুলো আছে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা, তাদের নিরাপত্তা কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হয়। এ ছাড়া পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানানো, অবৈধ অনুপ্রবেশ, কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনি অফিসের কার্যক্রমগুলো আরও সুসংহত ও সমন্বয় করা, পার্বত্য দুর্গম এলাকায় নির্বাচনি সরঞ্জাম পরিবহণ, হেলিকপ্টারের ব্যবহার কোস্টাল এরিয়াতে (উপকূলীয় এলাকা), কোস্ট গার্ডের কার্যক্রম গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় এবং তথ্য বিনিময় করা, ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের পুলিশের বডি অন ক্যামেরা—এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মূলত পাঁচ দিনের ডেপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম করা হয়। সেখানে একটা প্রস্তাব এসছে। এটা যেন আট দিন করা হয়। নির্বাচনের আগে তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে চার দিন, আমাদের ইনিশিয়াল প্রোগ্রামিং ছিল পাঁচ দিন। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব। আমরা যেটা এম্ফাসাইজ করেছি, তা হলো ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং। প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশনে তাদের কিছু নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স তারা কালেক্ট করে। ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং যেন করা হয়। এটা করলে জিনিসটা আরও সুসংহত হবে। কেননা কোনো একটা অর্গানাইজেশন হয়ত এক জায়গা, একজন হয়ত আরেকটা জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন, আরেকজন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন তিনটা জায়গা। তো এটা সমন্বয় করলে বেটার হবে।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘ড্রোনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করবেন। ইলেক্টলেট ইনকয়ারি কমিটি এক্সিকিউটিভ, ম্যাজিস্ট্রেট ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যাপারে বলা হয়েছে। পুলিশের আইজিপি জানিয়েছেন, দেড় লাখ পুলিশ সদস্য এই ইলেকশনে কাজ করবেন এবং সবচেয়ে বেশি সদস্য আসবে আনসার ভিডিপি থেকে। স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছেন, পুলিশের বডি ওন ক্যামেরা থাকবে। ড্রোনের ব্যবস্থা থাকবে। কাজেই ভিজিলেন্স অনেক বেশিই হবে। সবগুলার বাহিনী তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের বাহিনীদেরকে প্রশিক্ষিত করার একটা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। দুটো সুবিধা এখানে। একটা হচ্ছে, তারা নিজস্ব বাহিনীর প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে এটিকে আরও অর্থবহ এবং অবাদ করার জন্য যে প্রশিক্ষণ সেটা করতেছেন এবং আমরা একটি ভালো নির্বাচনমুখী।’
ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সেনাবাহিনী ইন টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মাঠে আছে। আরপিও সংশোধনে হয়ে গেলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় নিয়োজিত হওয়ার কথা।’ এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আরপিওটা সংশোধন হয়ে আসুক। এখানে দুটো মতামত আছে। বাট তাদের কন্টিনিউয়েশনের পক্ষেই আলোচনা হচ্ছে ইউনাইট টু সিভিল পাওয়ার যেটা আছে, সেটা আরপিওর সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে যেন না হয়, সে জিনিসটা আমরা লক্ষ্য করব।’
মবের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমদ বলেন, এ ব্যাপারে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। আজকের আলোচনাটা ছিল মূলত নির্বাচনকে সুষ্ঠু আর সুন্দর করার জন্য প্রস্তুতিমূলক বিষয়ে।’
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, এখনও পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ অস্ত্র তারা রিকভারি (উদ্ধার) করেছে। আরও কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনও পর্যন্ত রিকভারি হয়নি। প্রক্রিয়া চালু আছে।’

নিজস্ব প্রতিবেদক