অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেকের দাফন সম্পন্ন
ফরিদপুর জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল প্রসিকিউটর (এজিপি) ও ল’রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্য অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির (৬০) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুই দফা জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ফরিদপুর শহরের কাছে বদরপুর (মন্ত্রীর বাড়ির কাছে) এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মোসাদ্দেক বশির। তার মৃত্যুতে পুরো ফরিদপুরে নেমে আসে শোকের ছায়া।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে। ফরিদপুর বারের আইনজীবীরা ছাড়াও মোসাদ্দেকের বন্ধু-বান্ধব, দলীয় নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক মানুষ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ কয়েকজন। তারা মোসাদ্দেক বশিরের জন্য উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান।
আরও পড়ুন : পদ্মার চরে জমি দখল নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২
মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মমিনখার হাট বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন মাধবদীয়া ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
জানা গেছে, মোসাদ্দেক বশির জামায়াতে ইসলামীর ফরিদপুর পৌরশাখার যুব বিভাগের সভাপতি ছিলেন। তিনি জামায়াতের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কানাইপুর গিয়েছিলেন। মোটরসাইকেলে ফেরার পথে একটি কাভার্ড ভ্যান তাকে পেছন থেকে মাথার ডানপাশে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে তিনিসহ মোটরসাইকেল চালক রাস্তায় ছিটকে পড়েন। এ সময় বশিরের নাক, কান ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। পরে পেছনে থাকা অটোচালক তাদেরকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বশিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোসাদ্দেক বশিরের সঙ্গে থাকা আইনজীবী মজিবর বলেন, আমরা রাস্তার বামপাশেই ছিলাম। একটি কাভার্ড ভ্যান হঠাৎই আমাদের ওভারটেক করার সময় পেছনের দিক থেকে আঘাত করলে আমরা বামদিকে পড়ে যাই। আমি পড়ে গিয়ে হাতে-পায়ে আঘাত পেলেও বশির স্যার মাথায় আঘাত পান। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।
আরও পড়ুন : রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর আজ, ২০০৬ সালের এদিনে কী ঘটেছিল?
মোসাদ্দেক বশির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। পরে ফরিদপুরে আইনপেশায় যুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি আইন কর্মকর্তা (এজিপি) হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। বাবা-মা, ভাই-বোন ছাড়াও স্ত্রী এবং তিন কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে ৬ বছর, মেঝো মেয়ের ২ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৬ মাস।
জানাজায় অংশ নেওয়া হাজারো মানুষ বশিরের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবাই তাকে ভালো মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেন। কয়েকজন আইনজীবী জানান, মোসাদ্দেক বশির কখনও মামলার ফি চেয়ে নিতেন না। ভুক্তভোগী যা দিতেন তাই খুশি মনে গ্রহণ করতেন। আর যা আয় করতেন, তা অকাতরে গরিবদের জন্য খরচ করতেন। তিনি বেশিরভাগ সময় মামলা না করে উভয় পক্ষকে ডেকে সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন, যার কারণে অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্তমান সময়ে তার মতো মানুষ খুব বিরল বলে তারা মন্তব্য করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক