চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন, তবুও জনপ্রিয় সরকারি রেনু
উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা নওগাঁয় সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় মাছ চাষীদের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে উন্নত মানের এই সরকারি রেনুর চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে চাষীদেরকে বাড়তি দামে বেসরকারি খামার থেকে রেনু কিনতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উপকরণ ও জনবল বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে, তেমনি জেলার মাছ চাষীরা চাহিদা মতো উন্নত রেনু পেয়ে লাভবান ও উপকৃত হবেন।
নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁয় অবস্থিত প্রায় ১১ একর আয়তনের সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে সাড়ে চার একর জায়গায় ১০টি পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে কার্প জাতীয় মা মাছ—রুই, মৃগেল, কাতলা, কালবাউস ও পাঙ্গাসসহ অন্যান্য মাছ চাষ করা হয়, যা থেকে উন্নত মানের রেনু উৎপাদন করে চাষীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। মাছ চাষীরা জানান, সরকারি খামারের রেনু তুলনামূলকভাবে কম দামে পাওয়া যায় এবং এর গুণগত মান অনেক ভালো। এ রেনু থেকে মাছ চাষ করলে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বেশি হওয়ায় চাষীরা বেশি লাভবান হন।
সদর উপজেলার চকআবরশ গ্রামের মাছ চাষী মীর বকস বলেন, সরকারি খামারের রেনু উন্নত মানের। এতে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বেশি হওয়ায় দাম ভালো পাওয়া যায়। তবে সরকারি খামার থেকে চাহিদামতো রেনু না পাওয়ায় চাষীদের ভরসা বেসরকারি খামার। দুবলহাটি গ্রামের আজিম উদ্দিনও জানান, চাহিদা বেশি থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ায় বাইরের বেসরকারি খামার থেকে প্রতি কেজিতে অন্তত ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা বেশি দামে রেনু কিনতে হয়।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা যায়, খামারে বছরে প্রায় পাঁচ মাস রেনু উৎপাদন হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বেসরকারি খামারের রেনু দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণ করতে হয়। জেলায় ৩১টি বেসরকারি মৎস্য বীজ (হ্যাচারি) উৎপাদন খামার রয়েছে, যা থেকে বছরে প্রায় ১৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় রেনু উৎপাদন হয় এবং জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলাতেও সরবরাহ করা হয়।
খামারটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রেনু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০০ কেজি, যা থেকে রাজস্ব আয় হবে সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিগত অর্থবছরগুলোতেও রাজস্ব আয় সন্তোষজনক ছিল। যেমন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৭ কেজি রেনু থেকে সাত লাখ ৯ হাজার টাকা, এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭ কেজি রেনু থেকে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেন জানান, এ খামারে খামার ব্যবস্থাপকসহ পদসংখ্যা পাঁচজন হলেও দীর্ঘদিন ধরে পাম্প অপারেটর ও অফিস সহায়কসহ দুটি পদ শূন্য রয়েছে। জনবল কম থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি মনে করেন, জনবল ও উপকরণ বাড়ানো গেলে আরও বেশি পরিমাণ রেনু উৎপাদন হতো এবং রাজস্বও বেশি আয় হতো।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মো. আব্দুল মান্নান বলেন, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য গুণগত মানসম্পন্ন রেনু ও পোনা উৎপাদন করা এবং চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা। তিনি খামারে গবেষণা করে নতুন জাত সরবরাহ করার মাধ্যমে চাষীদের আরও উপকৃত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলী বলেন, পদ্মা ও যমুনাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ভালো মানের মা মাছ সংগ্রহ করে রেনু উৎপাদন করা হয় এবং চাষীদের সরকারি খামার থেকে রেনু কিনতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, যাতে তারা লাভবান হন। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, উন্নত মানের রেনু সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে।

আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ