দুদিনের বৃষ্টিতে আমন ও ভুট্টার ক্ষতি, শেরপুরের চাষিরা দুশ্চিন্তায়
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুরে গত বুধবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আজ শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা দুইদিন বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে রোপা আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ফলন ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে আধাপাকা ধান শুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সময়ে গত ১৫ দিন আগে বপন করা আগাম জাতের ভুট্টা ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন আলু চাষীরাও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর উপজেলাতেই এখন পর্যন্ত ২৫০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে। ১০০ হেক্টর ভুট্টার জমি পানিতে তলিয়ে আছে। ফসলের ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে। চলতি মৌসুমে শেরপুর উপজেলায় মোট ২২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন : ৯ মাসেই কোরআনে হাফেজ ইয়াছিন
শনিবার (১ নভেম্বর) উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, হলুদ হয়ে আসা ধানের ক্ষেতগুলো বৃষ্টিতে মাটিতে লুটিয়ে আছে। বিঘার পর বিঘা জমিতে ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হওয়া ভুট্টা গাছ বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। জমির ধান শুয়ে পড়ায় ফলন ও গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলার আমইন এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, পাঁচ একর জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। অনেক কষ্ট করে আবাদ করেছি। এখন যখন কাটার সময়, তখনই বৃষ্টি এসে সব নষ্ট করে দিল। জমিতে পানি জমে শীষ ভিজে রয়েছে, ফলন অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। ধান শুয়ে পড়েছে, এতে কয়েক দিনের মধ্যেই পোকা ধরবে; ধান চিটা হয়ে যাবে। এত পরিশ্রমের ফসল এভাবে নষ্ট হয়ে গেল ভাবতেই পারছি না।
উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ভুট্টাচাষী শহিদুল ইসলাম শাওন বলেন, ১৫ দিন আগে ১৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। কৃষি, বীজ ও সার মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এবার ভালো ফলনের আশা ছিল। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতে সব ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আসলে ভুট্টা চাষের ৩ ভাগের ২ ভাগ খরচ শুরুতেই হয়। এ ক্ষতি কীভাবে কেটে উঠব আল্লাহই জানেন।
আরও পড়ুন : জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের
আলতাদিঘী এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক হাতেম আলী জানান, সাধারণত এই সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে আমার ৫ বিঘা আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জুলফিকার হায়দার জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি- যেসব জমিতে ধান শুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে, এতে ক্ষতি কিছুটা কমবে। যেসব ধান পেঁকে গেছে সেগুলো কেটে ফেলতে বলা হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি ভুট্টার জমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী আধা কাঁচা ধানে বিষ প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে, যাতে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের জন্য কাজ চলছে এবং কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

জাহিদ হাসান, বগুড়া (শেরপুর-নন্দীগ্রাম)