বাজারে কৃষকরা আনছে না পেঁয়াজ, তাই বেড়েছে ঝাঁঝ
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে চঞ্চল হতে শুরু করে শরীয়তপুরের জাজিরার মিরাশার চাষি বাজার। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে দূর দূরান্ত থেকে আসা পাইকারদের ভিড়। কৃষকরা তাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য নসিমন কিংবা ভ্যানে করে নিয়ে আসে এই বাজারে। কৃষকরা এ বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে না আসায় বেড়েছে এর ঝাঁঝ।
এই বাজারটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। স্থানীয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় বাজার। কারণ এই বাজারে কোনো ইজারা মাসুল নেই।
জাজিরার মিরাশার চাষি বাজার, যেখানে প্রতিদিন বিপুল পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়। কিন্তু সম্প্রতি এই বাজারে পেঁয়াজের আদামি কমে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা এখন আর পেঁয়াজ নিয়ে আসছে না এই বাজারে। অন্য জেলা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বিক্রি করছেন এখানকার আড়তদাররা।
বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, সমবায় ভিত্তিক এই বাজার কৃষক আর পাইকাইদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। কৃষক আর পাইকাররা নিজেদের মধ্যে দামদর করে পণ্য বেচাকেনা করে থাকে। কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী এই বাজারে নেই। সম্প্রতি এই বাজারে পেঁয়াজের আমদানি নেই। কৃষকরা এখন আর পেঁয়াজ নিয়ে আসছে না।
চাষি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, বাজারটি কমপক্ষে আট বছরের পুরোনো। এখানে মৌসুমে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজারটি। এ ছাড়া কোনো ধরনের খাজনা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না এখানে। তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয় করত পারায় এ বাজারে আগ্রহ বাড়ছে পাইকার ও ব্যবসায়ীদের। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাজারে পেঁয়াজ আসতে শুরু করে। নতুন পেঁয়াজ পেতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে মান ভেদে কেজিপ্রতি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে আজকের বাজারে পেঁয়াজ বেচা-কেনা হয়েছে।
মিরাশার চাষি বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, জাজিরার মিরাশার চাষি বাজারটি দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে বড় কাঁচামালের বাজার। বর্তমানে বাজারটিতে পেঁয়াজের আমদানি নেই। বাহিরের জেলা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বিক্রি করতে হচ্ছে। আজকের বাজারে পাইকারি দরে প্রকার ভেদে পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কমবে।
শরীয়তপুর পৌসভার ডাক বাঙ্গলা এলাকার কয়েক জন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, আমরা প্রকার ভেদে ৯৫-১০০ টাকায় আজ পেঁয়াজ কিনেছি। খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করছি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, জেলায় এ বছর চার হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কৃষকরা পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেছে। জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। এই এলাকার কৃষকরা এখন চাষ করছে, নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম কমে যাবে।

আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর