শেখ হাসিনার রায় ঘোষণায় সারাদেশে আনন্দ মিছিল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর সারাদেশে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।
আরিচ আহমেদ শাহ, চট্টগ্রাম
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর চট্টগ্রামে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল করেছে এনসিপিসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
বিকেলে নগরীর বিপ্লব উদ্যানে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী মীর সোহেব, আরিফ মঈনুদ্দিন, যুবশক্তির আহ্বায়ক ইরফাত ইব্রাহিম, এম এ আলী আশিক বক্তব্য দেন। পরে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে ষোলশহর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর পরই শোকরানা নামাজ আদায় করা হয়।
এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী মীর সোহেব জানান, গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে যত ভাই-বোন নিহত হয়েছেন, এই রায়ের মাধ্যমে তাদের আত্মা কিছুটা শান্তি পাবে। তবে রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দেশের মানুষ শান্তি পাবে না। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন শাসকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার প্রথম রায় ঘোষণা একটি বিরল ঘটনা। রায়ে খুশি হয়ে মিষ্টি বিতরণ ও শোকরানা নামাজ আদায় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রায় ঘোষণার পরে ও আগে চট্টগ্রামে জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিদিনের মতো চলাচল করছে গণপরিবহণ, স্বাভাবিক রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচলও। অন্যান্য দিনের মতো চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে ট্রেনও। খোলা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও। রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা ঘটাতে না পারে তার জন্য নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সন্দেহজনক গাড়ি ও ব্যক্তিদের করা হচ্ছে তল্লাশি।
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ
শেখ হাসিনার রায়ের পর ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা শহরে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল করেছে। এর আগে বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থান নেয় বিএনপি এবং শহরের চরপাড়াসহ বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেয় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। পরে তারা শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে আনন্দ মিছিল বের করেন।
কর্মসূচিতে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রুকনুজ্জামান সরকার রুকন, জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল করিম, মহানগর আমির কামরুল আহসান এমরুলসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া রায়ে তাৎক্ষণিকভাবে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যোগে তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি বাজারে বিএনপির নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। আনন্দ মিছিলের নেতৃত্ব দেন কুমিল্লা-২ (হোমনা–তিতাস) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার।
এ সময় আক্তারুজ্জামান সরকার বলেন, এই রায়ে জুলাইয়ে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখবে যুগান্তকারী এ রায়। মিছিলে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়, পরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
নাসির আহমেদ, গাজীপুর
ফ্যাসিস্ট শেখ-হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ায় গাজীপুরে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
এ সময় গাজীপুর সদর মেট্রো থানার সভাপতি মেহেদি হাসান এলিচের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
এম আর মুর্তজা, মাদারীপুর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর মাদারীপুরের শিবচরে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মাদারীপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কামাল জামান মোল্লার নেতৃত্বে তার কর্মী-সমর্থকদের অংশ গ্রহণে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে শিবচর ৭১ চত্বর থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। আনন্দ মিছিলটি পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাজাহান মোল্লা সাজুসহ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কামাল জামান নুরুদ্দিন মোল্লা বলেন, আজ বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষসহ বিএনপি সবাই খুশি হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেছেন। শেখ হাসিনা হাজারও মায়ের বুক খালি করেছেন, তিনি হাজারও ভাইবোনকে অন্যায়ভাবে গুলি করে মেরেছেন। তার সাজা আজ তার বানানো ট্রাইব্যুনালেই রায় হয়েছে। এই রায় বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করেছে, আজ সাধারণ মানুষ আনন্দ উল্লাস করছে। শেখ হাসিনা আইনের শাসনকে ধ্বংস করে এ দেশ থেকে পালিয়েছেন। আমরা যেখানেই শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনীকে দেখব, আমরা তাকে ধরে আইনের হাতে তুলে দেব।
