‘পিটিয়ে ১৮ লাখ টাকা আদায়, শেষে গুলি’
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুরের তিন যুবক। সরাসরি ইতালি পৌঁছানোর দালালের সঙ্গে চুক্তি ২২ লাখ টাকার। সেটা দেওয়ার পরও, তাদের জিম্মি করা হয়। পিটিয়ে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। টাকা দেওয়ার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। ভূমধ্যসাগরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান মাদারীপুর সদর উপজেলার ইমরান খান (২৫)। তার মতো রাজৈর উপজেলার মুন্না তালুকদার ও বায়েজিদ শেখও একইভাবে প্রাণ হারান। এই নৃশংস মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দালালচক্রের বিরুদ্ধে উঠেছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন : ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর
নিহতদের পরিচয় ও স্বপ্নের বলি
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সরেজমিনে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ইমরান খান (২৫) মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে। মাদারীপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পরও ভালো চাকরি না হওয়ায় তিনি ইতালি গিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
নিহত অন্য দুই যুবক হলেন—রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের ইমারাত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার ও একই উপজেলার ঘোষলাকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিদ শেখ।
আরও পড়ুন : নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র মামদানির সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প
দালালচক্র ও নৃশংসতা
স্বজনদের অভিযোগ, একটু ভালো থাকার আশায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন ইমরান খান। সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেওয়ার শর্তে প্রতিবেশী ও মানবপাচার চক্রের সদস্য শিপন খানকে চুক্তি অনুযায়ী ২২ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
কিন্তু ইমরানকে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন করে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। শেষমেষ ১ নভেম্বর লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করলে ভূমধ্যসাগরে মাফিয়ার গুলিতে মারা যান ইমরান। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে তার মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। একইভাবে মাফিয়াদের গুলিতে ওইদিনই মারা যান মুন্না তালুকদার ও বায়েজিত শেখ। তিন যুবকের মৃত্যুর পর তাদের মরদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : বাড়ছে শীত, তাপমাত্রার পারদ নেমে ১৩ ডিগ্রিতে
দালালদের লাপাত্তা ও পুলিশের আশ্বাস
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দালালচক্রের পরিবারের লোকজন ঘরে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। তবে দালাল শিপনের স্বজনদের দাবি, এই ঘটনায় শিপন জড়িত নন এবং জোর করে কারও পাসপোর্ট নেননি।
অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছে শিপন। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের খুব সহজে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেন। এর আগে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া করা হবে। দালালদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এম. আর. মুর্তজা, মাদারীপুর