প্লট জালিয়াতি মামলায় শেখ হাসিনার যে সাজা চায় দুদক
ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা পৃথক তিন মামলার রায়ের দিন নির্ধারিত হয়েছে আগামী ২৭ নভেম্বর।
আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দুদকের পক্ষে এবং রাজউকের সাবেক সদস্য (স্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে এই রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।
এদিন সকালে কারাগার থেকে রাজউকের সাবেক সদস্য (স্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপরে আদালতে দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি যুক্তিতর্কের শুনানিতে বলেন, আজকে তিন মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য আছে। আদালতে এই পর্যন্ত ২৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রসিকিউশন পক্ষ অত্র মামলায় প্রমান করতে পেরেছে। আমরা আসামির সর্বচ্চ সাজা দাবি করছি।
যুক্তিতর্ক শুনানিতে দুদকের পিপি বলেন, আসামিরা প্লট বরাদ্দের যে বিধি রয়েছে তা ঠিকমতো মানেননি। দুদকের যে বিধি আছে, প্লট বরাদ্দ সম্পর্কে আসামিরা সেই মোতাবেকও ফলো করেনি। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউজক) যে বিধি ছিল আসামিরা সেটাও মানেননি। তিনি শুনানিতে বলেন, কারও প্লট বরাদ্দ নিতে হলে রাউজকের বিধি মোতাবেক আবেদন করতে হয়। এছাড়া হলফনামা দাখির করতে হয়। আসামিরা এ সমস্ত জিনিস সম্পূর্ণভাবে প্রদান করেননি।
দুদকের পিপি আরও বলেন, রাউজকের কর্মকর্তারা এই প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন যাচাই-বাচাই করেননি। শেখ হাসিনাসহ অন্যরা তথ্য গোপন করেছেন। কারণ হলফনামায় তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছেন। ঢাকা শহরে শেখ হাসিনার নামে ধানমণ্ডিতে যে বাড়ি আছে এবং ছেলে-মেয়ের নামেও সম্পদ রয়েছে এই বিষয়ে তথ্য গোপন করেছেন।
দুদকের পিপি বলেন, আমাদের (দুদক) তদন্তে আমরা হলফনামা পেয়েছি। সেই হলফনামাটি অবৈধভাবে দাখিল করা হয়েছিল। হলফনামায় সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি এবং অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তার বিষয়ে অভিযোগ যেটা, তারা কোন অবৈধ আদেশ মানতে বাধ্য না। সরকারি কর্মকর্তা পাবলিক সার্ভেন্ট, বোর্ড মেম্বার। বোর্ডের দায়িত্ব অনেক। সেখানে সরকারি কর্মকর্তা নোট অব ডিসেন্ড দিতে পারতেন। কিন্তু সে কোন নোট অব ডিসেন্ড দেন নাই। তিনি পদত্যাগ করতে পারতেন, কিন্তু সেটাও তিনি করেন নাই। তিনি সবার সাথে যোগসাজশে এই অপকর্ম করেছেন। তাই আসামিদের সহযোগি হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা কামনা করছি।
মামলায় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি খুরশীদ আলমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শাহীনুর ইসলাম যুক্তিতর্ক শুনানিতে বলেন, আসামি খুরশীদ আলম আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিনি কোনো অবৈধ সুবিধা নেননি।
আইনজীবী আরও বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশনা তার পক্ষে এড়ানো সম্ভব ছিল না এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা তার হাতে ছিল না। বিজ্ঞ আদালত এই মামলায় কোথাও বলা হয়নি যে, খুরশীদ আলম ঘুষ নিয়েছেন বা ব্যক্তিগত লাভে জড়িত ছিলেন। বরং, তিনি দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেছেন।
আসামির যুক্তির বিপরীতে দুদকের আইনজীবী বলেন, আসামি খুরশীদ আলম দায়িত্বে থাকাকালীন দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। তিনি বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাই যোগসাজশের মাধ্যমে অনিয়ম করেছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। তাই আসামির সর্বোচ্চ সাজা কামনা করছি। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ সকল কিছু প্রমাণে সক্ষম হয়েছে।
প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়।
শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদক