প্রবাসীদের ভোটাধিকার আমরা সবার আগে তুলেছিলাম : নজরুল ইসলাম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আজকের মূল আলোচ্য বিষয় নির্বাচন ঘিরে। আপনারা জানেন, গত ১৯ নভেম্বর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন শুরু হয়েছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবি আমরা বিএনপিই সবার আগে তুলেছিলাম।
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এম এ এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’, বিএনপির ২৭ দফা কর্মসূচি এবং বিভিন্ন দলের সঙ্গে ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যেও এই দাবি ছিল। তখন অন্য কারও পক্ষ থেকে এমন দাবি তোলা হয়নি।
নজরুল ইসলাম বলেন, আজ আল্লাহর মেহেরবানিতে সেই দাবি বাস্তবায়নের পথে। নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু যাদের এনআইডি আছে তাদের নয়- নতুন করে এনআইডি প্রদানের জন্যও বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানো হয়েছে, যা কার্যকর উদ্যোগ বলে আমরা মনে করি। এজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল বলেন, তবে আমরা কিছু পরামর্শও দিয়েছি। যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক বেশি- যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত- সেখানে অনেকেই দূরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন যেখানে নিবন্ধন করা কঠিন। তাই আমরা অনুরোধ করেছি, এসব দেশে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হোক, যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি ভোটার হতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে তাদের সিডিউলে এক ধরনের সুযোগ আছে- মূল নিবন্ধন শেষে কয়েকদিন যারা বাদ পড়বে, তাদের জন্য অতিরিক্ত নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা হবে। আমরা এটাকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছি বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম।
বিএনপিনেতা নজরুল বলেন, আরেকটি বিষয় হলো, প্রবাসীদের অনেকেরই এনআইডি নেই। বাস্তব কারণে বেশিরভাগই এনআইডি করতে পারেননি এবং সব দেশেই নতুন এনআইডি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি, বাংলাদেশি পাসপোর্টকেও পরিচয়পত্র হিসেবে ধরে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, যদিও আমরা জানি, অনেক ফেক পাসপোর্ট আছে- যারা বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন মানুষও পূর্ববর্তী সরকারের আমলে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। আমরা চাই না তারা ভোটার হন। এজন্য আমরা বলেছি- পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই করা হোক। পাসপোর্টের ছবি পাঠিয়ে গ্রামের ঠিকানা থেকে ভেরিফিকেশন করলে যদি সঠিক পাওয়া যায়, তাহলে তাকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন সম্মত হয়েছে এবং বলেছে- সময় কম হলেও তারা বিবেচনায় নেবে।
নজরুল বলেন, আরও একটি বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য। আমরা তাতে সম্মতি জানিয়েছি। কারণ এই নির্বাচনের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ১৬ বছরের আন্দোলন, বহু মানুষের প্রাণহানি, লাখ লাখ নেতাকর্মীর কারাবরণ- এসবের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে এসেছি। ২৪ তারিখের ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বিজয়ের একটি অংশ অর্জন করেছি। ‘এক দফা’ দাবি তখনই পূর্ণ হবে, যখন দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, গণভোট নিয়েও আলোচনা হয়েছে- তবে আমাদের মতে এটি নতুন কিছু নয়। গণভোট আইন আজ পাস হয়েছে, তাই নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হওয়ার বিষয়ে নতুন কোনো বিতর্ক নেই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রবাসীদের ভোটার হওয়া নিয়ে আপনারা একটি প্রশ্ন তুললেন- এনআইডি কার্ড তো সরকারই দেয়, পাসপোর্টও সরকারই দেয়। প্রবাসীরা তো এনআইডি হাতে নিয়ে বিদেশে যাননি- বাংলাদেশ থেকেই ইস্যু হয়েছে। আমাদের দূতাবাস ও নির্বাচন কমিশনের প্রচারণা যথেষ্ট হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও এসেছে। দূতাবাস অনেক জায়গায় শুধু সামান্য কিছু পোস্টার দিয়ে দায়সারা কাজ করছে।
নজরুল বলেন, তবে এটিও সত্য- এই প্রক্রিয়াটি এবারই প্রথম শুরু হলো। আগে যে প্রবাসী ভোটের বিধান ছিল, তার মাধ্যমে গত নির্বাচনে মাত্র ১৫৪ জন ভোট দিয়েছিলেন। এবার ১৯ তারিখ থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ নিবন্ধিত হয়েছে- এটা অবশ্যই অগ্রগতি। যদিও আরও ভালো হতে পারতো।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি রাষ্ট্রদূত ছিলাম। জানি, অনেক দূতাবাসের সক্ষমতা সীমিত। নির্বাচন কমিশনও এই কাজ প্রথমবার করছে, কিছু ত্রুটি থাকতেই পারে। আমরা বলেছি- তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। আর পাসপোর্ট যাচাইয়ের যৌক্তিক কারণও তুলে ধরেছি। আমরা দলের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিচ্ছি- যাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিবন্ধনে উৎসাহিত হন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেও নির্দেশনা দিয়েছেন- দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণ জরুরি।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, লটারি দিয়ে এসপিদের দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই- এটি ব্যক্তিগত মত, দলের সিদ্ধান্ত নয়। সাংবাদিকদের মধ্যেও কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পান যোগ্যতার ভিত্তিতে। তাই এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশন বিবেচনা করতে পারে, তবে দলের পক্ষ থেকে এখনও সিদ্ধান্ত নেই।
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লা ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদক