গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি
গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা থেকে প্রণীত অধ্যাদেশটি জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হয়।
এটি অধ্যাদেশ নং-৬৭। এতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না তা যাচাইয়ে গণভোটের বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত এ অধ্যাদেশ।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য গণভোটে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : গণভোট অধ্যাদেশ অনুমোদন দিল উপদেষ্টা পরিষদ
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে ও রাষ্ট্রপতির নিকট এটি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেন। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
অধ্যাদেশের ১ ও ২ ক্রমিকে সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন এবং সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের ৩ ক্রমিকে গণভোটের প্রশ্ন বিষয়ে এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, গণভোটে একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা হবে- ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ ও জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’ ; (হ্যাঁ/ না)
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধন করিতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
অধ্যাদেশের ৪নং ক্রমিকে ভোটকেন্দ্র বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে সেই সব ভোটকেন্দ্রে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ক্রমিক ৫ -এ রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন কর্তৃক যে সব রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ ও অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে সেই সব রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবে।
ক্রমিক ৬ এ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে। (১) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সব প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তারা নিযুক্ত হবেন সেই সব প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তা গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবে। (২) প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে গণভোট গ্রহণ কার্য পরিচালনা করবেন এবং ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়ী থাকবেন। তার মতে ভোট গ্রহণে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এরূপ ঘটনা সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অথবা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।
(৩) সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সেই সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন যে সব ক্ষমতা ও দায়িত্ব কমিশন কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক তার ওপর অর্পণ করা হবে।
(৪) যদি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না থাকেন বা তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, তাহা হইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের মধ্য হতে একজনকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্থলে কাজ করার ক্ষমতা অর্পণ করবেন।
(৫) ভোট গ্রহণ চলাকালীন যে কোনো সময় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কারণ লিপিবদ্ধ করে যে কোনো প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অথবা পোলিং কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবেন এবং উক্তরূপ সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য তার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
৭ নং ক্রমিকে ভোটার তালিকা বিয়েয় বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ১) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা হবে গণভোটের ভোটার তালিকা।
(২) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নিকট সরবরাহকৃত প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটদানের অধিকারী ভোটারগণের নাম সংবলিত ভোটার তালিকা গণভোটের ভোটার তালিকা হিসাবে ব্যবহৃত হবে।
৮ নং ক্রমিকে গণভোট গ্রহণের সময় বিষয়ে বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় হবে গণভোটের ভোট গ্রহণের সময়।
আরও পড়ুন : গণভোটের আয়োজন করতে ইসিকে সরকারের চিঠি : সিইসি
৯ নং ক্রমিকে মুলতবি ভোটগ্রহণ বলা হয়েছে। (১) যদি প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনো কারণে ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত বা ব্যাহত হয়, তাহা হইলে তিনি ভোট গ্রহণ স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবেন, এবং তৎসম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অনতিবিলম্বে অবহিত করবেন।
(২) যে ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অনতিবিলম্বে তৎসংক্রান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে কমিশনের নিকট প্রতিবেদন পেশ করবেন এবং কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফলাফল দ্বারা গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তা হলে কমিশন উক্ত ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করবে। কমিশন কোনো ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিলে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা যথাশিগগিরই সম্ভব ভোট গ্রহণের তারিখ, স্থান ও সময় নির্ধারণ করে একটি গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।
১০ নং ক্রমিকে বলা হয়েছে, গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট গ্রহণ। (১) গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে ও উল্লিখিত প্রশ্নটিতে জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত একক ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যেক ভোটার ভোটদান করবেন।
(২) গণভোটের ব্যালট ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হতে পৃথক ও ভিন্ন রঙের হবে।
ব্যালট বাক্স বিষয়ে বলা হয়েছে, (১) নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত, নির্ধারিত ও সরবরাহকৃত ব্যালট বাক্স ভোট গ্রহণের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরবরাহকৃত একই ব্যালট বাক্স গণভোটের ব্যালট বাক্স হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করতে পারবে। (২) রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রত্যেক প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট বাক্স সরবরাহ করবেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)