পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদ ইসলামের
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সব দলের প্রস্তুতির জন্য ভালো হয় এমন সময়ে তফসিল ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ আহ্বান জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সার্টিফিকেট যেটা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক নিবন্ধিত দলকে দেওয়া হয় সেটি আমরা গ্রহণ করেছি। জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি নিবন্ধিত দল হিসেবে এখন থেকে কাজ করছে। আপনারা জানেন যে আমাদের এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। অত্যন্ত কম সময়ে তারা এই সকল শর্ত পূরণ করেছে। আমি আজকে আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মী যারা কাজ করেছেন এবং এনসিপির শুভাকাঙ্ক্ষী যারা আমাদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
নাহিদ আরও বলেন, আমাদের প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পরে। প্রতীকটি হচ্ছে শাপলাকলি।এই শাপলাকলি প্রতীকে এবার এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে গ্রাম-বাংলার মানুষের প্রতীক হিসেবে শাপলাকলি নির্বাচনে থাকবে এবং ইনশআল্লাহ আমরা জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করে যেতে পারবো।
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেছি। বিশেষত এই নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবনা অনুযায়ী আপনারা জানেন যে আরপিওতে পরিবর্তন এনেছে। প্রত্যেকটা দল তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে এই সংস্কার প্রস্তাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। আমরা মনে করেছি যে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চার জন্য এই নিয়মটি প্রয়োজন। প্রত্যেকটা দলকে তার নিজস্ব প্রতীকে নিজস্ব মার্কায় নিজস্ব আদর্শে রাজনীতি করা উচিত। কোনো দলের সাথে জোট বা সমঝোতা হলেও তার প্রতীক আলাদা হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা দেখে আসছি যে সরকারকে এবং নির্বাচন কমিশনকে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে একটি দলের পক্ষ থেকে। যাতে এই আইনটি এই সংস্কার প্রস্তাবনাটি বাতিল করা হয় এবং যাতে জোটের সঙ্গীরা অন্য দলের সঙ্গীরা এক মার্কায় নির্বাচন করতে পারে। আমরা এটার বিরোধিতা জানিয়েছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বলেছি যে হলফনামায় যে প্রার্থীরা যেই তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে থাকবে সেই তথ্য যাতে নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে এবং সেই তথ্যে যদি ভুল থাকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন যেন সবার জন্য সমানভাবে আইন প্রয়োগ করে। বিশেষত অর্থ ব্যয়ের বিষয়টা আপনারা জানেন। নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতিতে কালো টাকার ছড়াছড়ি থাকে এবং যেই অর্থ নির্ধারিত থাকে তার থেকেও অনেক বেশি অর্থ তারা ব্যয় করে। সেই বিষয়ে যাতে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং আইন ভঙ্গকারীদের যাতে ব্যবস্থা নেয়।
এনসিপির এ নেতা বলেন, আমরা চাই এবারের নির্বাচন একটি সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আরেকটি যেটা কমন বিষয় সব দলই বলে। আমরাও বলেছি যাতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড বজায় থাকে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বিভিন্ন দলের, আমাদেরও উদ্বেগ রয়েছে। ডিসি-এসপি তাদের বদলি হচ্ছে সেই বিষয়ে যাতে নির্বাচন কমিশন খেয়াল রাখে। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করছি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এখানে যাতে সঠিক লোকরাই নিযুক্ত হয়। কারণ যদি রাজনৈতিক প্রভাব এই বদলিগুলার ক্ষেত্রে, নিয়োগের ক্ষেত্রে থাকে তাহলে নির্বাচনে কিন্তু এটার প্রভাব বিস্তার করবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে এবং গণভোটের বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। গণভোটের যে একটি প্রশ্ন এবং তার যে চারটি ভাগ এবং তার পক্ষে হ্যাঁ বা না ভোট এবং নির্বাচন কমিশন কিছু অনুশীলন ভিত্তিক যে ভোটগুলো হচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা বলেছেন যে এটাতে সময় বেশি লাগছে বা কম লাগছে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আমরা বলেছি যাতে এটা সঠিকভাবে প্রচার করা হয়। কারণ এটা যদি প্রথম থেকেই প্রচারণা না করা হয় তাহলে জনগণের কাছে কিন্তু তথ্যটি পৌঁছাবে না।
তফসিল প্রসঙ্গে এনসিপিপ্রধান বলেন, তফসিল কবে ঘোষণা হবে ইসি আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানায়নি। তবে আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসি তফসিল দেবে। আমরা বলেছি যে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই তারা যাতে তফসিলের ঘোষণাটি দেয়। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের সেই উদ্বেগ এখনো আছে এবং নির্বাচন কমিশনে আমরা বলেছি। নির্বাচন কমিশন পুরনো আইনে গঠিত হয়েছে। আমরা এটার বিরোধিতা করেছি। আমরা বলেছিলাম যে সংস্কার প্রস্তাবনা অনুযায়ী এটি গঠিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা তো নির্বাচনের পথেও এগুতে চাই। যেহেতু বিদ্যমান বাস্তবতা অনুযায়ী সরকার এটি করেছে। আমরা এজন্য সেটার আর কঠোর হইনি।
নাহিদ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ক্যাপাসিটি নিয়ে কিন্তু সবসময় উদ্বেগ জানিয়ে আসছি। বিগত বছরগুলোতে কাজ করেছে অনেক দুর্নীতিবাজ অফিসার। তারা কিন্তু এই নির্বাচন কমিশনে এখনও রয়ে গেছে। আমাদের কাছে বিভিন্ন প্রমাণও আছে। আমরা সেটা কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে বলেছি।

নিজস্ব প্রতিবেদক