অভাবে জর্জরিত ৩ হাজার মানুষ পেল ফ্রি চিকিৎসা
মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত পুটাইল ইউনিয়নের ঘোস্তা স্কুল মাঠ। নদী পেরিয়ে যেখানে হাসপাতালে যাওয়া আজও অনেক পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জ—সেই গ্রামেই পৌঁছে গেছে বিনামূল্যের চিকিৎসা সেবা। মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) আয়োজন করা হয় এক ব্যতিক্রমী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, যাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় করেন তিন হাজারেরও বেশি রোগী।
শিশু থেকে বয়স্ক—সবার মুখেই ছিল স্বস্তির হাসি। কারও দীর্ঘদিনের ব্যথা, কারও চোখের অসুবিধা, কারও আবার শিশুর জ্বর—সব সমস্যায় পাশে ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ফ্রি ওষুধ, সেবা আর সবচেয়ে বড় কথা—এক টুকরো ভরসা পেয়ে এলাকার মানুষের মুখে ফুটে ওঠে কৃতজ্ঞতার ছাপ।
গৃহিণী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। হাসপাতালে যাওয়ার টাকা কই? এখানে ডাক্তার দেখল, ওষুধ দিল—মনে হইতাছে আল্লাহ আমাদের কথা শুনছেন।’
দিনমজুর শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিন কামাই করি। ডাক্তার দেখানোর সময় পাই না। আজ ডাক্তাররা এত যত্ন করে দেখলেন, মনে হইল আমার আপন ভাই-বোনরা দেখতাছে।’
চোখের সমস্যায় ভোগা নবম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা আক্তার আনন্দভরে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই লেখা দেখতে সমস্যা হইত। আজ চশমার জন্য পরামর্শ পাইছি, ওষুধও দিছে। এখন পড়াশোনা আরও ভালো করতে পারব।’
১০ বিভাগে ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৫০ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল, মেডিসিন, গাইনি, অর্থোপেডিকস, চক্ষু, দন্তসহ মোট ১০টি বিভাগ নিয়ে গড়ে ওঠে পুরো ক্যাম্প এলাকা। প্রতিটি বিভাগে ছিলেন দুজন করে কনসালটেন্ট চিকিৎসক। সহায়তায় ছিলেন হাসপাতালের অর্ধশতাধিক কর্মী—সবাই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নেন।
চিকিৎসা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন মুন্নু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খানম রিতা। তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতাল আমার বাবা হারুনার রশিদ খান মুন্নু স্বপ্ন দেখে গেছেন—যাতে কোনো গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে কষ্ট না পায়। আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই, আরও বিস্তৃত করতে চাই।’
মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, শুধু এই ক্যাম্প নয়—পর্যায়ক্রমে মানিকগঞ্জের প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রামেই পৌঁছে দেওয়া হবে এ ধরনের বিনামূল্যের চিকিৎসা সেবা।

আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ