ভুয়া স্ত্রী সাজিয়ে মামলা, আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রামপুরা থানাধীন রাসেল মিয়া হত্যার ঘটনায় ভুয়া স্ত্রী সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে ঢাকা বারের এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সম্প্রতি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আক্তার তিথি এই আদেশ দেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহবুব হোসেন রানা এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাহবুব হোসেন রানা বলেন, ঢাকার সিএমএম আদালতে রাসেল মিয়া নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়। ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে রাসেল মিয়া নিহতের ঘটনায় প্রথম বাদী হয়ে মামলা করেন শারমিন আক্তার। এই মামলার পরে আদালত রামপুরা থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলা নং:- রামপুরা থানার মামলা নং-০৫/১৫৩, তারিখ ২২/০৮/২০২৪। পরবর্তীতে একই বিষয় নিয়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বিথী আক্তার নামে আরেক নারী রাসেল মিয়াকে স্বামী দাবি করে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন এখতিয়ারাধীন কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলা করার পরে আদালতের বিচারক কদমতলী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং একই বিষয়ে পূর্বে কোন মামলা হয়েছে কিনা, তাও জানতে চান।
পিপি মাহবুব বলেন, আদালতের আদেশের পরে কদমতলী থানার পুলিশ তদন্ত করে দেখতে পান একই ঘটনা নিয়ে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে এবং ভিকটিম একজন ও স্ত্রী দাবিদার দুজন। পরবর্তীতে পুলিশের সন্দেহ হলে, ভিকটিম রাসেল মিয়ার দ্বিতীয় মামলার বাদী বিথী আক্তারের ঠিকানায় তদন্তের জন্য যান। সেখানে তদন্তে গিয়ে বিথীর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া বাদীর মোবাইলফোন নম্বর, ভোটার আইডিসহ সব কিছুতে গড়মিল পান। তদন্তের পরে পুলিশ বুঝতে পারেন বিথী রাসেল মিয়াকে ভুয়া স্বামী সাজিয়ে প্রতারণার উদ্দেশে মিথ্যা মামলা করেছেন।
পিপি মাহবুব আরও বলেন, পুলিশ বিথীর মামলাটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিথী ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনের পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আক্তার তিথী বিচারক বাদী ও আইনজীবীকে কারণ দর্শানের নির্দেশ দেন।
পিপি বলেন, বাদীকে কারণ দর্শানোর আদেশ দেওয়ার পরেও তিনি আদালতে এসে কোন জবাব দেননি। এছাড়া আইনজীবী হাজির হয়ে জবাব দেন। কিন্তু জবাবে সন্তুষ্টি না হওয়ায় বিচারক আইনজীবী জুবায়ের আল মাহমুদের পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা এর দ্বিতীয় অধ্যায় এর ১২নং বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) সভাপতিকে নির্দেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আইনজীবী জুবায়ের আলম মাহমুদের বিষয়ে একটি অভিযোগ এসেছে। এছাড়া আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একটি আদেশও আজ পেয়েছি। সামনে ঢাকার বারের কমিটির সাধারণ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে এবং সেখানে আইনজীবীর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা সিদ্ধান্ত হবে।
রাসেল মিয়ার প্রথম মামলার নথি থেকে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় গুলিতে রাসেল মিয়া মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদেরসহ ২৮ জনের তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সিএমএম আদালতে মামলা করেন। মামলার পরে বিচারক আফনান সুমি আবেদনটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে রামপুরা থানাকে নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান, সাবেক র্যাব ডিজি হারুন অর রশীদ, ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসেন, মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম, এডিসি সাব্বির রহমান, র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন, রামপুরা থানার ওসি মসিউর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক সাগর আহম্মেদ শামীমসহ আরো চারজন।
দ্বিতীয় মামলার নথি থেকে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাসেল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে বিথী নামের আরেক নারী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার পরে আদালত মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, রামপুরা থানাধীন গোলচত্বরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে রাসেল গুলিবৃদ্ধ হন। এ সময় নিকটবর্তী ফরাজী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিমকে মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে ভিকটিম রাসেলকে মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ভিকটিমের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ভিকটিমের মরদেহ শনাক্ত করেন। ভিকটিমের স্ত্রী হাসপাতালে ভিকটিমকে ময়নাতদন্ত করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত না করে ভিকটিমের লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রীর কথিত স্ত্রী বিথী আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

শুভ্র সিনহা রায়