ইউনিয়ন ভূমি সহকারীর বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ
বদলগাছীর মিঠাপুর-মথুরাপুর-পাহাড়পুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য ও সেবার অনিয়ম যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারি খাজনার হার স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারে নির্ধারিত হওয়ার কথা থাকলেও এখানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে খাজনা কমিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, অফিসে দালালচক্রের মাধ্যমে নিয়মিত ঘুষ আদায় করা হয়। জমির খারিজ, নামজারি, খাজনা, ডিসিআর- যে সেবাই লাগুক না কেন, টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না। একের পর এক অভিযোগ আসলেও রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
স্থানীয় সুজাউল হোসেন জানান, শ্বশুরের তিনটি খতিয়ানের জন্য প্রথমে ৬৯ হাজার ৪১৪ টাকার রশিদ দেওয়া হয়। পরে রাসেল হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে অনলাইনে একই জমির রশিদ দেওয়া হয় মাত্র ৫ হাজার ৮৪২ টাকার। সফটওয়্যারে খাজনা কমানো-বাড়ানো যায় না। তাহলে ঘুষ দিলে খাজনা কমে যায় কীভাবে?
ফাতেমা বেগম অভিযোগ করে জানান, চেক (খাজনার রশিদ) তুলতে গেলে তার কাছে প্রথমে ২৮ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে রাসেল হোসেনকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পর তাকে মাত্র ৫৭১ টাকার চেক দেওয়া হয়। তবে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা আজও ফেরত পাননি বলে জানান তিনি।
এক সপ্তাহের অনুসন্ধানে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। তৌহিদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি তিনটি খতিয়ানের জন্য প্রথমে ৪ লাখ টাকার রশিদ পান। পরে তিনি ২ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার পর সেই একই জমির চূড়ান্ত রশিদ দেওয়া হয় মাত্র ২ হাজার ২০০ টাকায়।
আলেপ উদ্দিন ডিসিআর কাটার জন্য এক লাখ টাকার চুক্তি করে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তার কাজ হয়নি। অন্যদিকে এনামুল হক খারিজের নামে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তার আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল হোসেন সাংবাদিকদের দেখে দ্রুত অফিস ছাড়েন। ফোনেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরেরদিন অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার মুখে প্রথম এই ধরনের অভিযোগ শুনলাম। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
বদলগাছী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পলাশ উদ্দিন বলেন, মৌখিকভাবে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি জানান, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযোগ তদন্তাধীন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিঠু হাসান, নওগাঁ (বদলগাছী-মহাদেবপুর)