শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিচার শুরু
আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনে ডিজিএফআইয়ের জয়েন্ট ইন্টারোগেশন (জেআইসি) সেলে ২৬ জনকে গুম ও নির্যাতনের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তারেক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ১১ সাবেক ও বর্তমান সেনাকর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্ব তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আজ আদেশের দিন ধার্য রাখেন।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেন, জেআইসি সেলে শতশত মানুষকে বন্দি করে নির্যাতন করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ হিল আমান আজমী, মাইকেল চাকমাসহ ২৬ জন নির্যাতনের পর মুক্তি পান। সকল গুমের নির্দেশনা দিতেন শেখ হাসিনা, তা সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে বাস্তবায়ন করতেন তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
পরে শেখ হাসিনাসহ বাকি আসামিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন তাদের আইনজীবীরা।
এ মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক সিদ্দিক ছাড়াও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক, পাঁচ পরিচালক ও একজন সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসামি। তবে মামলায় তিনজন গ্রেপ্তার রয়েছেন। তারা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
শেখ হাসিনাসহ পলাতক অন্য আসামিরা হলেন–শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ ও লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে মামলার পটভূমি তুলে ধরে ৭ ডিসেম্বর জানান, জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের ধরে এনে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। শুনানিতে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের ঘটনার বিবরণ উপস্থাপন করা হয়। এসব ঘটনার ভিত্তিতে পাঁচটি অভিযোগ এনে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ গঠনের আবেদন করা হয়। পরে স্টেট ডিফেন্স এবং গ্রেপ্তার তিন আসামির আইনজীবীরা সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল আজকের দিন শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।
গত ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনজীবী নিয়োগের আবেদন করলে তাঁর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ৩ ডিসেম্বর সরে দাঁড়ালে পরে শেখ হাসিনার পক্ষে মো. আমির হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর গ্রেপ্তার তিন সেনাকর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির নিশ্চিত করতে সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক