হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে ওসমান হাদির মরদেহ
লাল-সবুজ কফিনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির নিথর দেহ আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে ওসমান হাদির মরদেহ নেওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে। আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জানাজার আগ পর্যন্ত তার মরদেহ এখানেই থাকবে।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আগামীকাল বাদ জোহর জানাজার পর শহীদ ওসমান হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে শহীদ ওসমান হাদিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে হাদির মরদেহ বহনকারী উড়োজাহাজ ঢাকার হযরত শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্র-জনতা আজ ও আগামীকাল শৃঙ্খলার সাথে আন্দোলন জারি রাখবেন যেন কোনো গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আন্দোলন স্থিমিত করতে না পারে। একই সাথে সহিংসতা করার সুযোগও না পায়। মরদেহ দেখার কোনো সুযোগ থাকবে না। সকলের নিকট শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং শহীদ ওসমান হাদির জন্য দোয়া পৌঁছানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই রাতেই সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
শরিফ ওসমান হাদি ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, যার আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা হাদির জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম।
ওসমান হাদির শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঝালকাঠির বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স মাস্টাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করার পর হাদি জ্ঞান বিতরণের মহান পেশা শিক্ষকতাকে বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
শরিফ ওসমান হাদি এক সন্তানের জনক। পরিবার, শিক্ষকতা ও জ্ঞানচর্চাকে ঘিরেই বর্তমানে তার প্রাত্যহিক জীবন আবর্তিত হতো।

নিজস্ব প্রতিবেদক