আজও তালাবদ্ধ পাবিপ্রবি রেজিস্ট্রার দপ্তর
১৭ দফা দাবিতে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তালা দিয়ে আজ রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কর্মকর্তারা।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার দপ্তরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রার দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবিপ্রবির উপাচার্য রুস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ মার্চ। নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন খাওয়া, ভূয়া ভাউচার করে অর্থ লোপাট, ভাতিজি কানিজ ফাতেমা, ভাগিনা হাসিবুর রহমানসহ ডজনখানেক নিকট ও দূরের আত্মীয় নিয়োগ, বাড়িভাড়া ফাঁকি দেওয়া, ছেলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকার গাড়ি বরাদ্দ দেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ-সম্মেলন, মানববন্ধন, একক-অবস্থান কর্মসূচি, অনশনসহ নানাভাবে প্রতিবাদ করে আসছে পাবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং ছাত্রছাত্রীরা। ইউজিসির তদন্তে এসব অনিয়মের বেশকিছু প্রমাণিত হয়েছে এবং তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যয় করা বিপুল অঙ্কের টাকা ফেরত দিয়েছেন। দুদকেও চলছে তদন্ত।
এসব বিতর্কিত কাজের মধ্যেই মেয়াদ শেষে স্বজনপ্রীতিসহ নিয়োগবাণিজ্যের মাধ্যমে ১০২ জনের গণনিয়োগ দেওয়ায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের বাধার মুখে সভা বাতিল করেন। এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাকে অবরুদ্ধ করে নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
অবশেষে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য অ্যাডেভাকেট শামসুল হক টুকুর মধ্যস্থতায় ২৪ তারিখে রিজেন্ট বোর্ডের সভার তারিখ ঘোষণা করে অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্ত হয়ে উপাচার্য রোস্তম আলী পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। ১৩ দিন রাজশাহীর বাসভবনে অবস্থান করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চুপিসারে ক্যাম্পাসে আসেন। তার ক্যাম্পাসে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং ‘রুস্তমের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘দুর্নীতিবাজ রুস্তমের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘এক দফা এক দাবি, রুস্তম তুই ক্যাম্পাস ছাড়বি’। তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করলে এই বিক্ষোভের মুখে উপাচার্য ২৪ তারিখে রিজেন্ট বোর্ডের সভা করার কথা থাকলেও তা না করে শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং ছাত্রছাত্রীদের রোষানলে পড়ার ভয়ে ২৫ তারিখ ভোর ৫টার দিকে কাউকে না জানিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগের খবর শুনে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা নানা দাবি-দাওয়া সংলিত স্মারকলিপি দিয়ে তা পূরণের দাবিতে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য এত দিন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোনো দাবি না মেনে কেবল নিজের স্বার্থ হাসিল করেছেন।’
সরেজমিনে পাবিপ্রবিতে গিয়ে দেখা যায়, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করছে। এদিকে উপাচার্য পাবিপ্রবির ঢাকাস্থ গেস্টহাউস থেকে ক্যাম্পাসে না ফিরে রাজশাহীর বাড়িতে ফিরে গেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্ম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয় এখনো ক্যাম্পাসে ফেরেননি। কর্মকর্তাদের দাবির বিষয়ে আমাকে কোনো নির্দেশনাও দেননি।’ রেজিস্ট্রার সবাইকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্যেষ্ঠ এক অধ্যাপক বলেন, ‘উপাচার্য একের পর এক ভুল করেছেন। কিছু সুবিধাবাদী ও দুষ্ট লোকের খপ্পড়ে পড়ে গত চার বছরে বিতর্কিত সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এখন বিদায়বেলায় অসহায়ের মতো পালিয়ে ফিরছেন। এটা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের জন্য লজ্জাজনক। এর ফলে সমাজে শিক্ষকদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উপাচার্যদের কর্মকাণ্ড এমন হওয়া উচিত নয়।’
উপাচার্য রুস্তম আলীর ফোনে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম আবদুল আলীম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকাতে তারা বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পুনরায় রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বান করলে এবং গণনিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করলে ক্যাম্পাসে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।