ছাত্রলীগ না করায় বুকের উপর দাঁড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ
ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে রুমের ভেতর ডেকে নিয়ে গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ওই শিক্ষার্থী এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আহত ওই শিক্ষার্থী এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হুমায়ুন কবীর আজ সোমবার বিকেলে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কমিটির সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার, সদস্য সচিব প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সদস্য ছাত্র উপদেষ্টা ড. তপন কুমার সরকার।
আগামী তিন কার্যদিবসে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের রাজনীতি না করায় গতকাল রাতে সদ্য চালু হওয়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই ছাত্রের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের পর আজ সোমবার সকালে তাকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তার সহপাঠীরা বলেন, নিহাদকে রাত দেড়টার পর ডেকে নিয়ে গিয়ে পিঠে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হয়ে সে বেশ কয়েকবার বমি করেছে। এ সময় হুমকি দেওয়া হয়, তুই আবরারের মতো মরবি।
এদিকে রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো লিখিত অভিযোগে নিহাদ জানান, আমি কেন ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করি না, এ অভিযোগেই মূলত আমাকে ডাকা হয়। আমাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমার হাতে রামদা ধরানো হয়৷ খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেওয়ানো হয়। আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।
অভিযোগপত্রে আরও জানা যায়, ‘সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ ভাই আমাকে হলে নিয়ে যান এবং যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে থাপ্পড় মারেন নাট্যকলা বিভাগের হিমেল ভাই। আমার বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুহিন ভাই, ২০১৪-১৫ সেশনের মুমিন ভাই, ইইই বিভাগের অ্যালেক্স সাব্বির ভাই, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানভীর ভাইসহ আরও পাঁচ-ছয়জন টানা লাথি ঘুষি মারতে থাকেন। সাথে ফোকলোর বিভাগের যাযাবর নাঈম (আবু নাঈম আব্দুল্লাহ) ভাই লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে অনেক মেরেছেন নাঈম ভাই। আমি কেন রাকিব ভাইয়ের রাজনীতি করি না। আমি নাকি অন্যদেরও রাজনীতি করতে বাধা দিয়েছি, যা ভিত্তিহীন। আমার পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে নাকি রাজনীতি না করে উপায় নেই।
একপর্যায়ে নাট্যকলার হিমেল ভাই আমার হাতে রামদা ধরিয়ে দিয়ে আমাকে যাযাবর নাঈম ভাইয়ের কাছে রাজনীতি করব বলে পা ধরে মাফ চাইতে বলেন। আরও বলেন, কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যাবি না। রাকিব ভাই চাইলে ভিসি পরিবর্তন হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, আবরারের মতো মরবি।’