শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি দল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তাঁদেরকে সিলেট সার্কিট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে বিকেল তিনটার দিকে শুরু হয় বৈঠক। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও উপস্থিত আছেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা এম এ খায়ের এনটিভি অনলাইনকে শিক্ষামন্ত্রীর সিলেট সফরের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শুক্রবার সিলেট যাচ্ছেন। পরে আজ সকাল ৯টার দিকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান দীপু মনি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ কেন প্রয়োজন, তা তুলে ধরবেন তাঁরা। এ ছাড়া অন্যান্য দাবি পূরণের নিশ্চয়তাও চাইবেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটি দুপুর আড়াইটায় ক্যাম্পাস থেকে সার্কিট হাউজের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রতিনিধি দলে আছেন- শাহরিয়ার আবেদিন, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, মোহাইমিনুল বাশার রাজ, আশিক হোসাইন মারুফ, ইয়াসির সরকার, সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ, আমেনা বেগম, মীর রানা ও জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।
বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রতিনিধি দল জানায়, আমাদের প্রধান দাবি উপাচার্যকে অপসারণ। তাঁকে সরিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু, মামলা প্রত্যাহার, আর্থিক লেনদেনের অ্যাকাউন্ট চালু, পুলিশি হামলায় গুরুতর আহত সজল কুন্ডুকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া ও নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিতকরণ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হবে।
গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।
কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনের আট দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে হাতে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।
এর ১৪ দিন পর গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে পরপর দুদিন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে ও চলবে।’ এদিন তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উপাচার্যের পক্ষ নেওয়াদের হুঁশিয়ারি দেন।
বিক্ষোভ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘আমরা অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। সে সময় আমাদের বলা হয়েছিল আমাদের বিভিন্ন দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও আমাদের দেওয়া আশ্বাসগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়নের কোনো প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পারিনি। এমনকি শিক্ষার্থীদের ওপর দেওয়া দুটি মামলা এখনো ঝুলে রয়েছে।’
শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘আমরা আমাদের কঠোর কর্মসূচিগুলো থেকে সরে আসার পরও ন্যূনতম দাবিগুলো পূরণ করা হয়নি। এ জন্য এত দিন পর আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায়ের জন্য কাল বৃহস্পতিবারও আমরা বিক্ষোভ মিছিল করব।’
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সিলেট সফরের কথা জানা যায়। শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে তিনি সেখানে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।