খুলনায় এইচএসসিতে পাঁচ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সাফল্য

খুলনার সরকারি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় (পিএইচটি) সেন্টার থেকে এ বছর পাঁচ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। পাঁচজনই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও দুইজন বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তিনজনের মধ্যে দুজন ‘এ’, একজন ‘এ মাইনাস’ এবং বাকশ্রবণ প্রতিবন্ধী দুই জনের একজন ‘বি’ ও একজন ‘সি’ গ্রেড পেয়েছেন।
এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোসা. ফিরোজা খাতুন ও তার ছোট বোন মোসা. সোনিয়া খাতুন চমক দেখিয়েছেন। খুলনার দৌলতপুর মুহসীন মহিলা কলেজ থেকে অংশ নেন তারা। তাদের স্বপ্ন শিক্ষক হয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান করানো। ফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা।
এদিকে, তাদের সফলতায় খুশি পিএইচটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও সহপাঠীরা। বড় বোন ফিরোজা খাতুন বলেন, খুলনার পিএইচটি সেন্টারে প্রথম শ্রেণিতে আমি ও আমার ছোট বোন ভর্তি হয়েছিলাম। ১৩ বছর ধরে এখানেই রয়েছি আমরা। একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। দৌলতপুর মুহসীন মহিলা কলেজ থেকে দুইজনই এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। আমি জিপিএ ৪ পেয়ে পাস করেছি। আর ছোট বোন সোনিয়া ৪.৬৭ পয়েন্ট পেয়েছে। নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি শিক্ষক হতে চাই। শিক্ষক হয়ে প্রতিবন্ধী ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া শেখাবো।
ছোট বোন সোনিয়া খাতুন বলেন, আরও ভালো করা সম্ভব হতো যদি সবধরনের সুবিধা থাকতো। বিশেষ করে বেইল পদ্ধতির বইগুলো থাকলে। আইসিটি, বাংলা ও ইংরেজি বেইল পদ্ধতির বই ছিল। বাকীগুলো শুনে শুনে মুখস্ত করতে হতো। পরীক্ষায় আমি বলেছি এবং একজন শ্রুতি লেখক সেটা লিখেছে। ফলাফলে আমরা খুশি। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে পিএইচটি সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমরা দুই বোন একইসঙ্গে লেখাপড়া করতাম। সেখানকার শিক্ষকরা আমাদের খুব সহযোগিতা করেছেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি কয়রা উপজেলায় হলেও ২০১৬ সালে বাবা-মা দু’জনই কাজের জন্য ভারতে গিয়েছেন। এখনও তারা সেখানেই রয়েছেন। এখন স্বপ্ন পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো। প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া শিখানো। এ জন্য শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।
শুধু ফিরোজা আর সোনিয়াই নয়, এইচএসসিতে অংশ নেওয়া পিএইচটি সেন্টারের শতভাগ দৃষ্টি ও বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পাস করেছে। তাদের দুজনের সঙ্গে এবারের এইচএসসিতে পাস করেছে বাক প্রতিবন্ধী শাম্মী আক্তারও। তিনি কথা বলতে ও শুনতে না পারলেও শিক্ষকদের সঙ্গে ইশিরায় কথা বলেন। একইসঙ্গে লিখে নিজের কথা জানাতে পারেন। কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় ইশারায় প্রশ্ন করা হয় শাম্মীকে। তিনি লিখে ও ইশারায় তার উত্তর দেন।
শাম্মী জানান, বাবা ফরিদপুরের ছালাম শেখ এবং মা জাহানারা বেগম। এবারের পরীক্ষায় পাশ করে তিনি খুব খুশি। খুলনার গোয়ালখালী পিএইচটি সেন্টারের ৫ জন নিবাসী এবারের এইচএসসিতে অংশ নিয়ে পাস করেছে। এছাড়া পিএইচটি সেন্টারের নিবাসী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ময়না খাতুন রুনা জিপিএ ৩.৭৫ ও বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী মিতু ৩.০৪ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছে।
প্রতিষ্ঠানের সহকারি তত্ত্বাবধায়ক নার্গিস আক্তার বলেন, আমাদের এখানকার নিবাসী ফিরোজা ও সোনিয়া দুই বোন খুবই ভালো ফলাফল করেছে। এবারের এইচএসসিতে অংশ নেওয়া পাঁচজনই একসঙ্গে পাস করেছে এতে আনন্দিত, রেজাল্ট পেয়ে আমরা খুশি।
খুলনার গোয়ালখালী পিএইচটি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক ও সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি বাক শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়কে পিএইচটি সেন্টার বলা হয়। এ বছর এখানকার পাঁচজন মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও দুজন বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তিনজনের মধ্যে দুজন ‘এ’, একজন ‘এ মাইনাস’ এবং বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী দুই জনের একজন ‘বি’ ও একজন ‘সি’ গ্রেড পেয়ে পাস করেছে। সেন্টারের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। এতে আমরা আনন্দিত।