রেজাল্ট শিট হারালেন কুবির সহকারী অধ্যাপক
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ভাইভার ফলাফল শিট হারিয়ে ফেলার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান খানের বিরুদ্ধে। এর ফলে চতুর্থ সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ আটকে আছে এবং শিক্ষার্থীদের পঞ্চম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা তিন দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ সেমিস্টারের ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ২১ আগস্ট। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান খান। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ভাইভার ফলাফল তালিকা হারিয়ে যাওয়ায় তা এখনও প্রকাশিত হয়নি। এর জেরে পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা ২৬ অক্টোবর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২৯ অক্টোবর নেওয়া হবে বলে বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। যিনি এখন দায়িত্বে আছেন, তিনি হয়তো সামনেও আমাদের পরীক্ষা কমিটিতে থাকবেন। ভবিষ্যতে ফলাফলে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় আমরা এ নিয়ে কিছু বলতেও পারি না।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান খান রেজাল্ট শিট হারানোর কথা স্বীকার করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভাইভা শেষে গড় নম্বর নির্ধারণ করে একটি কপি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও, আমাদের বিভাগে এ নিয়মটি তেমনভাবে অনুসরণ করা হয় না। আমি নম্বর শিটগুলো নিজের কাছে একটি ফাইলে সংরক্ষণ করেছিলাম। হল-সংক্রান্ত কাজের কারণে ব্যস্ত থাকার পর প্রায় দুই মাস পর যখন ফলাফল প্রস্তুত করতে যাই, তখন ফাইলটি খুঁজে পাই না।
ড. মাহমুদুল হাসান খান আরও জানান, শিক্ষার্থীদের লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়ার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে দ্বিতীয়বার ভাইভা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তাকে রেজাল্ট শিট হারানোর বিষয়টি জানালে তিনি তাদের আলোচনার জন্য বলেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে তাকে টেলিফোনে ২৩ অক্টোবর পুনরায় ভাইভা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ভাইভা শেষ হওয়ার পরেই মূল নম্বরপত্রটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর জমা দেওয়ার কথা এবং এর একটি কপি পরীক্ষা কমিটির সভাপতির কাছে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, ভাইস চ্যান্সেলর স্যারের নির্দেশনায় আমি গতকাল সন্ধ্যায় নতুন করে ভাইভা নেওয়ার জন্য উক্ত কমিটিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো হায়দার আলী বলেন, রেজাল্ট শিট হারিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা পুনরায় ভাইভা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি এড়াতেই আমি নির্বাহী আদেশে পুনরায় ভাইভা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। নিয়ম মেনে এগোতে গেলে এতে বেশ সময় লাগত।
একই কমিটি দিয়ে কেন পুনরায় ভাইভা নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের ভাইভাটি ওই কমিটির সময়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাই এবারের ভাইভা পরীক্ষাও একই কমিটির মাধ্যমে নেওয়া হবে। এটিকে আমরা পুনর্মূল্যায়ন হিসেবে দেখছি। কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য জানান, পরবর্তী সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে নেওয়া হবে।

ফরহাদ হিমু, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়