দেশে একই সঙ্গে আর্টিমিয়া ও লবণ চাষ সম্ভব
দেশে এখন থেকে একই সঙ্গে আর্টিমিয়া ও লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষকরা আর্টিমিয়া ও লবণের সমন্বিত চাষের এই নতুন পদ্ধতি উন্মোচন করেছেন। এতদিন এগুলো আলাদাভাবে চাষ করা হতো। আর্টিমিয়া হলো এক ধরনের লবণজলীয় ক্ষুদ্র প্রাণী, যা মাছ ও চিংড়ির পোনা উৎপাদনে অত্যন্ত পুষ্টিকর জীবন্ত খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গবেষকরা বলছেন, উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ চাষিরা একই স্থানে একই সঙ্গে সমন্বিত পদ্ধতিতে আর্টিমিয়া এবং লবণ চাষ করে বেশি আয় করতে পারবেন। পাশাপাশি আর্টিমিয়া বায়োমাস ও সিস্ট উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণ হবে, ফলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
সমন্বিত আর্টিমিয়া চাষের মাধ্যমে আর্টিমিয়া বায়োমাস, সিস্ট, আর্টিমিয়া ফ্লেক ও গুণগত মানসম্পন্ন লবণ উৎপাদন করা যায়। আর্টিমিয়া ‘ফিল্টার ফিডার’ হিসেবে পানিতে দ্রবীভূত বর্জ্য আত্তীকরণ করে। ফলে আর্টিমিয়া চাষে ব্যবহৃত লবণ পানি থেকে উৎপাদিত লবণ প্রচলিত পদ্ধতির লবণের চেয়ে অধিক পরিষ্কার ও অধিক গুণগত মানসম্পন্ন হয়।
গবেষকরা আশা করছেন, স্থানীয় পর্যায়ে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ টেকসই মৎস্য উৎপাদনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং ‘ব্লু ইকোনোমি’ বাস্তবায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
সম্প্রতি ‘মৎস্য অধিদপ্তরের সাস্টেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (এসসিএমএফপি)’-এর অর্থায়নে একটি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন হয়। ২০২৪ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয় ২০২৫ সালের জুলাইয়ে।
প্রকল্প শেষে গবেষকরা ‘মাঠ পর্যায়ে আর্টিমিয়া ও লবণ এর সমন্বিত চাষ সহায়িকা’ নামের একটি সহায়িকা প্রকাশ করেন। এতে আর্টিমিয়া কি, কেনো এটি চাষ করা দরকার, কীভাবে লবণের সঙ্গে একত্রে চাষ করলে উৎপাদন ও লাভ বাড়ে- সে বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহায়িকাটিতে মাঠ বা পুকুর প্রস্তুতি, আর্টিমিয়ার খাদ্য, বায়োমাস ও সিস্ট সংগ্রহ, লবণ উৎপাদন, ফ্লেক ফিড প্রস্তুত, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের ধাপও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতি লবণ চাষীদের আর্থিক লাভকে বাড়িয়ে বিকল্প আয়ের পথ খুলে দেবে। দেশের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সমন্বিতভাবে এই চাষ চালু করা গেলে এটি আমাদের ‘ব্লু ইকোনোমি’র লক্ষ্য পূরণে বড় ভূমিকা পালন করবে।
গবেষণা সহকারী আলম পারভেজ বলেন, দেশের কৃত্রিম মৎস্য, চিংড়ি প্রজনন ও উৎপাদন কেন্দ্রসমূহে আর্টিমিয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সিস্ট, বায়োমাস ও ফ্লেক সংরক্ষণ করে সারাবছর ব্যবহার করা যায় এবং এর মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমবে।
অধ্যাপক আয়শা আক্তার বলেন, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয়ভাবে সিস্ট, বায়োমাস ও ফ্লেক তৈরি করা, যা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রগুলো সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সঙ্গে এটি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং চাষীদের জীবনমান উন্নত হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন আমাদের কাজ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা, যাতে কৃষক ও লবণচাষীরা বাণিজ্যিকভাবে এই পণ্য বাজারজাত করতে পারেন। তিনি আশা করেন, সরকারি প্রণোদনা পেলে এটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)