কান্নায়-আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে নদীপাড়ের বাতাস
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে নদীপাড়ের বাতাস। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে শতাধিক মানুষ।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের পর লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়েও কারও কারও মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই, মৃতের সংখ্যার সঠিক তথ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত জানানো সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নদীর পাড়ে আর চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে আশঙ্কায় রয়েছেন লঞ্চযাত্রীদের অনেক স্বজন। প্রিয়জনের হদিস না পেয়ে দিগ্বিদিক ছুটছেন তাঁরা। স্বজনেরা জানেন না, তাঁদের প্রিয়জনদের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ছয় মাসের সন্তানকে বাঁচাতে অন্য এক যাত্রীর কোলে দিয়েছিলেন এক মা। এখন তার আর সন্ধান মিলছে না। মিলবে কি না, তাও নিশ্চিত নন তিনি। তাই সন্তানের খোঁজে আশঙ্কায় আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। আশপাশের মানুষদের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে সেই মা বলছেন, ‘যদি কেউ আমার সন্তানের খোঁজ পান, আমাকে একটু বলবেন প্লিজ।’
এদিকে, নদীতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে ডুবুরি দল। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রাও। তাঁরা বলছেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা এর আগে দেখেননি তাঁরা।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ বেশিরভাগ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে, সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন অনেক রোগী। চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মীদের। তবুও সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া কিছু রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তোফায়েল ইসলামকে আহ্বায়ক করে মন্ত্রণালয়টির পক্ষ থেকে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন।
এ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের একজন, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের একজন, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী আজ শুক্রবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
জানা গেছে, লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া এলাকায় পৌঁছালে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ইঞ্জিন কক্ষে আগুন লাগে। পরে লঞ্চটি সদর উপজেলার দিয়াকুল এলাকায় গিয়ে নদীর তীরে নোঙর করে। খবর পেয়ে ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে দগ্ধ যাত্রীদের উদ্ধার করে ঝালকাঠির বিভিন্ন হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানান, ঢাকা থেকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বরগুনা যাচ্ছিল এমভি অভিযান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি। রাতে ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুন লেগে শতাধিক যাত্রী দগ্ধ হয়।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক জানান, ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যাত্রীদের উদ্ধারে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। দগ্ধ যাত্রীদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।