সিন্ডিকেটের কারণে দাম পাচ্ছেন না আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়া চাষীরা
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে উপজেলার আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়ার খ্যাতি দেশজুড়ে। জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক কৃষি মেলা, প্রদর্শনী ও বিক্রির তালিকায় রয়েছে আড়িয়াল বিলের এ কুমড়া। এবছরও বিলের গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, আলমপুর, বাড়ৈখালিসহ ১৪৫ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছে। গেলো বছর ১৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল।
বর্তমানে শেষ মুহূর্তে চলছে মিষ্টি কুমড়ার উত্তোলন। বিলের বিস্তীর্ণ জমি থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সেখানকার চাষীরা। এই মিষ্টি কুমড়া যেন প্রকৃতির অপরূপ দান। মিষ্টি কুমড়া বিলের জমি থেকে উত্তোলন করে সড়কের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে এখন। ভ্রমণ পিপাসুদের অনেকেই আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে সঙ্গে করে নিচ্ছেন বিশাল আকৃতির এই মিষ্টি কুমড়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার। এক একটি ৫ থেকে ১০০ কেজি ওজনের কুমড়া দেখতে যেমন সুন্দর, আকৃতিতেও তেমনি বিশাল। শ্রমিকরা জমি থেকে মাথায় ও নৌকায় করে গাদিঘাটসহ বিলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে কুমড়া মজুত করেন। সেখান থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাইকাররা গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে যান।
তবে এবার মিষ্টি কুমড়ার আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বিলের কৃষকরা। ঢাকা থেকে আসা পাইকারদের সিন্ডিকেট কম দামেই কিনছেন এ কুমড়া। এবার বিলে কুমড়ার আবাদ যেমন কম হয়েছে, তেমনি উৎপাদনও কম হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৪ শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১২টি চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারায় ২০ থেকে ৬০টি পর্যন্ত কুমড়া হয়ে থাকে। আশ্বিন মাসে এই মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ শুরু হয়। রোপণের তিন মাস পরই ফসল তোলা যায়। শীতের শেষের দিকে ফসল বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়। এ বছরও ফলন ভালো হয়েছে। গেল বছর বিলে ১১ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়া আবাদ হয়েছিল।
গাদিঘাট গ্রামের চাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার তিন কানি জমিতে কুমড়া চাষ করেছি। ঢাকা থেকে অনেক পাইকার আসে। তারা সিন্ডিকেট করে আসে। বাজারে যে ধরনের দাম থাকে, সে হিসেবে দাম আমরা পাই না। আমাদের কাছ থেকে অনেক কম দামে কুমড়া কিনে নেয়। আড়িয়াল বিলের যে কুমড়া, তার স্বাদই আলাদা। তারপরও অনেক দাম কম পাই।
পাইকার জামাল হোসেন বলেন, আমরা চাষীদের কাছ থেকে লট বা মন হিসবে কিনি। ৬০ মনের কুমড়ার গাড়ি বিক্রি হয় ২৫ হাজার টাকা আর ৭০ থেকে ৮০ মনের গাড়ি বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আমরা ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। এটা আবার বিভিন্ন জনের কাছে যায়। এতে কিছু দাম বেড়ে যায়। আমরা চাষীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি হিসেব করে লট কিনি।
জামাল হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে বাজার ভালো না। চাষীরা নিজেরাও ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করে। এখন কুমড়া নিতে ভাড়া বেশি পড়ে যায়। কুমড়ার সাইজ অনুযায়ী দাম হাঁকানো হয়। বাজার ভালো থাকলে লাভ বেশি হয়। বাজার মন্দা থাকলে লোকসান হয়।
কুমড়ার দাম খুচরা বেশি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কৃষকের কাছ থেকে কেনার পর কয়েকটি হাত বদল হয়ে দাম বেড়ে যায়। ’
গাদিঘাট গ্রামের কৃষক ফারুক বেপারী বলেন, আমি ১০ গন্ডা জমিতে কুমড়া চাষ করেছি। এবার দাম ভালো পাইনি। পাইকাররা সিন্ডিকেট করে আসে। জমি থেকে কুমড়া উঠানোর পর, যদি কোনো পাইকার এসে দাম করে, এটা ওই পাইকার ছাড়া অন্য কোনো পাইকারের কাছে বিক্রি করতে পারি না। একজন দাম করে গেলে আর কোনো পাইকার আসে না। তারা সবাই সিন্ডিকেট করে আসে। ঢাকায় নিয়ে গেলেও একই অবস্থা।
ফারুক বেপারী আরও বলেন, ঢাকায় নেওয়ার পর তারা একজন এসে দাম বলে যায়। পরে আর কেউ আসে না। বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করি। কিন্তু বাজারে আমাদের কুমড়ার দাম অনেক বেশি। আমরা দাম পাই না। কষ্ট করি আমরা। লাভ করে পাইকারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সান্ত্বনা রাণী জানান, এ বছর আড়িয়াল বিলের শ্রীনগর অংশে ১৪৫ হেক্টর জমিতে কুমড়ার চাষ হয়েছে। আগাম কুমড়া চাষ করায় এ বছর চাষিরা অধিক লাভবান হয়েছে। চারা রোপণের ফসল উৎপাদনে সময় লাগে তিন মাসের মতো। এ বিলের কুমড়ার জাত একেবারেই স্থানীয় ও স্বতন্ত্র। অন্য কোনো এলাকার জমিতে এই কুমড়ার বীজ রোপণ করলেও এমন স্বাদ ও বিশাল আকৃতির হয় না।