নওগাঁয় পরকীয়ার জেরে প্রতিবন্ধী নারী হত্যা, মূলহোতা গ্রেপ্তার
নওগাঁ জেলা পুলিশ প্রতিবন্ধী নারী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং মরদেহ উদ্ধার করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে নওগাঁর রাণীনগর থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে জিরাবো পশ্চিমপাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদ এলাকা থেকে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় ওই প্রতিবন্ধী নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম মাহবুবুল আলম (৪৫)। তার বাড়ি রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। নিহত ওই প্রতিবন্ধী নারীর নাম লাভলী খাতুন (৩১)। তিনি রাণীনগর উপেজেলার ভবানীপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের মেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী লাভলী খাতুন (৩১) বাড়ি থেকে বের হন। রাতে বাড়ি না ফেরায় তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন। চার দিনেও লাভলী খাতুনের খোঁজ না পেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাণীনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বড় ভাই। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তিতে একই গ্রামের হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মাহবুবুল আলমকে পুলিশ নাটোর জেলার হালতি-খোলাবাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যে গতকাল বিকেলে ঢাকার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকা থেকে লাভলী খাতুনের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহবুবুল আলম জানান, লাভলী খাতুনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের পরকীয়া ছিল। এ ছাড়া তিনি লাভলী খাতুনের কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে সেই ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঢাকায় চলে যান। এরপর মাহাবুব আলম সেখান থেকেই লাভলী খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। কিছুদিন পর লাভলী খাতুন তার পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য এবং তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাভলীকে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাহবুবুল আলম। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ফেব্রুয়ারি কৌশলে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তাকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর মাহবুবুল আলমসহ কয়েকজন মিলে লাভলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং লাশ বস্তাবন্দি করে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন।
এ ঘটনায় মাহবুবুল আলমকে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য হাজির করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বলেও জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গাজিউর রহমান, নওগাঁ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, ডিএসবির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুরাইয়া খাতুন, রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন আকদন্দসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।