শান্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ এবং মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডবের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে শহরের দোকানপাট খুলতে শুরু করে। শুরু হয়েছে স্কুল-কলেজ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে শান্তিপূর্ণ কাজকর্ম চলছে।
এদিকে, এ ঘটনায় সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
urgentPhoto
গত সোমবার সন্ধ্যায় জেলা পরিষদ মার্কেটের বিজয় টেলিকমের মালিক রনির সঙ্গে শহরের বড় মাদ্রাসার এক ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে মাদ্রাসাছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে এতে ছাত্রলীগ ও এলাকাবাসী যোগ দেয়। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
মঙ্গলবার ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ মাসুদুর রহমানের (২২)। তাঁর গ্রামের বাড়ি নবীনগর উপজেলার সামন্তঘর গ্রামে।
সোমবার রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে মাসুদুর রহমানকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। এ অভিযোগ তুলে ছাত্ররা মঙ্গলবার ভোরে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মাদ্রাসাছাত্র নিহতের ঘটনায় বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা বেশ কিছু স্থানে ভাঙচুর করে বলেও জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ সময়ে শহরের টিএ রোড ও ব্রিজের মোড় এলাকায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেই দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশন অবরোধ করে সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায় ছাত্ররা। তারা রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ প্রায় নয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
পরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাদ্রাসার শীর্ষ আলেম-ওলামাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় বসে। দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা সাজিদুর রহমান হরতাল প্রত্যাহারের এ ঘোষণা দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এম এ মাসুদ, ১২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নজরুল ইসলাম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৪-এর অধিনায়কসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আলেম-ওলামাদের দাবি অনুযায়ী সন্ধ্যায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে সহকারী পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।