চাকরি ছাড়ার বিবাদে দায়ের কোপে স্ত্রী খুন, স্বামী গ্রেপ্তার
সুমি আক্তার (২২) বিয়ের পরও চাকরি করবেন, বিয়ের আগে এমন কথাই ছিল তাঁর স্বামী রাসেল মোল্লা রূপকের (২৮) সঙ্গে। কিন্তু, বিয়ের আড়াই মাস যেতে না যেতেই রূপক সুর পাল্টে ফেলেন। একইসঙ্গে সুমির শ্বশুরবাড়ির লোকজনও পূর্বের মত থেকে সরে আসে। আর এখানেই বাধে বিপত্তি।
সুমির চাকরি ছাড়ার বিষয় নিয়ে দফায় দফায় ঝামেলা তৈরি হয় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে। এ ঘটনার জের ধরে গত ২১ জুলাই রূপকের সঙ্গে সুমির কথা কাটাকাটি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে রূপক সুমির গলায় ধারালো দায়ের কোপ দেন। এতে মারা যান সুমি।
ঘটনার পরদিন অর্থাৎ সুমি আক্তারের বাবা রহম আলী (৬০) রুপককে একমাত্র অভিযুক্ত করে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সর্বশেষ গতকাল ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে রূপককে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
আজ বুধবার রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২১ জুলাই মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার শোলধারা সাকিনস্থ রূপকের বাসায় সুমির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে রাসেল মোল্লা রূপকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে গতকাল রূপককে গ্রেপ্তার করা হয়।
রূপকের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত মানিকগঞ্জ জজ কোর্টে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে প্রায় ৯ বছর কাজ করেছেন। প্রায় আড়াই মাস আগে পরিবারের সম্মতিতে সুমির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের আগে থেকে সুমি এসডিআই নামের একটি বেসরকারি সংস্থায় বানিয়াজুড়ি ইউনিয়নে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। বিয়ের সময় কথা ছিল, সুমি আক্তার বিয়ের পরও চাকরি করবেন।
মুক্তা ধর বলেন, কিন্তু বিয়ের পর স্বামী রূপক ও তাঁর পরিবারের মত পাল্টে যায়। সবাই সুমিকে ছাকরি ছাড়ার কথা জানান বারবার। পরিপ্রেক্ষিতে সুমি জানান, তিনি অফিসেও চাকরি ছাড়ার কথা জানিয়েছেন। অফিস তাঁর বিকল্প দক্ষ কর্মী খুঁজছে। বিকল্প না পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে (সুমি) চাকরি না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছে অফিস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চাকরি ছাড়ার বিষয়টি ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির লোকজন অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুমি আক্তারের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন সকালে চাকরি ছাড়ার বিষয়ে রূপক ও সুমি আক্তারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রূপক সুমি আক্তারকে কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকলে রূপকের মা রওশন আরা বেগম রূপককে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু, রূপক আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে গলায় কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করলে সুমি আক্তার মারা যান। পরে রূপক বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।