যানজট থেকে মুক্তি নিয়ে দুর্ভাবনায় রাজধানীবাসী
রাজধানীতে যানজট দিন দিন বাড়ছেই। এটি এখন রাজধানীবাসীদের জন্য আতঙ্কের নাম। রাস্তায় বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে তা কারও জানা নেই। এর নেই কোনো প্রতিকারও। নগরবাসী অতিষ্ট হয়ে যানজটের ভোগান্তিতে। মুক্তি চায় তারা। ছুটির এই কয়দিন জট না থাকলেও সোমবার থেকে সড়কের চিরচেনা চিত্র ফিরবে বলে মনে করছে তারা। দুর্ভাবনায় কাটছে প্রহর।
ঢাকার কয়েকটি স্থানে প্রতিদিন তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। তেজগাঁও-ফার্মগেট-ধানমণ্ডি-শাহবাগ প্রতিদিন এই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। বনানী থেকে বিমানবন্দর- উত্তরা রোড, উত্তরা থেকে পল্টন- মতিঝিল রুটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত হয় গাড়িতে বসে রাস্তাতেই। গুলশান-বনানী-বাড্ডা-কুড়িল ও গুলিস্থান-নবাবপুর-জিপিও-পল্টন-মতিঝিলে যেতে মানুষ এক প্রকার অতিষ্ট। গুলিস্থান-নবাবপুর-জিপিও-পল্টন-মতিঝিল এলাকায় রাস্তা ফাঁকা পাওয়া কঠিন। এই এলাকায় যানজট প্রতিদিনের সঙ্গী।
বনানী থেকে বিমানবন্দর-উত্তরা রোড
বনানী থেকে বিমানবন্দর-উত্তরা রোড, দুই পাশেই হঠাৎ যানজট তৈরি হয়। যার ফলে এই সড়কের যাত্রীদের প্রায়ই ফ্লাইট মিস করতে হয়। বিমানবন্দর এলাকায় যানজটেই শুধু বসে থাকতে হয় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। যানজট তৈরি হলে পল্টন বা মতিঝিল আসতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।
উত্তরা থেকে পল্টন-মতিঝিল
বিমানবন্দর এলাকার জন্য উত্তরা থেকে পল্টন-মতিঝিল বা এদিকে প্রতিদিন যাতায়াতকারীদের জন্য খুবই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। হাতে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে প্রতিদিন ঘর থেকে বের হতে হয়।
উত্তরা থেকে সচিবালয় প্রতিদিন অফিস করেন রায়হান। তিনি জানান, উত্তরা থেকে সচিবালয় পর্যন্ত আসতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। হয়ত সৌভাগ্যক্রমে কখনও রাস্তা ফাঁকা থাকলে দেড় ঘণ্টায় আসা যায়। তবে এটি খুবই কম। যদি হঠাৎ কোনো যানজট তৈরি হয়, তখন অনেক সময় দুই/তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগে আসতে। বেশি যানজট হয় বিমানবন্দর, বনানী, ও তেজগাঁও এলাকায়।
তেজগাঁও-ফার্মগেট-ধানমন্ডি-শাহবাগ
তেজগাঁও-ফার্মগেট-ধানমন্ডি-শাহবাগ প্রতিদিন এই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এসব এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের।
গুলশান-বনানী-বাড্ডা-কুড়িল
গুলশান-বনানী-বাড্ডা-কুড়িল এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে।
গুলিস্থান-নবাবপুর-জিপিও-পল্টন-মতিঝিল
গুলিস্থান-নবাবপুর-জিপিও-পল্টন-মতিঝিল এলাকায় রাস্তা ফাঁকা পাওয়া কঠিন। এই এলাকায় যানজট প্রতিদিনের সঙ্গী।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পল্টন অফিস করেন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই ঘণ্টা সময় লাগে যদি বেশি সকালে বের হতে পারি। আর যদি ১০টার পর বের হই, তাহলে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। কখনো অস্বাভাবিক যানজট তৈরি হলে আড়াই-তিনঘণ্টা সময় লেগে যায় পল্টন পৌঁছাতে। এই রোডে বেশি যানজট হয় বাড্ডা, মৌচাক ও পল্টন মোড়ে।’
মিরপুরে বসবাসকারী মুন্না বলেন, ‘মিরপুর থেকে মতিঝিল আসতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। আর যদি প্রায় সময় এখন যানজট বেশি হয় ফলে আসতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার বেশি। এই রোডে যানজট বেশি থাকে ফার্মগেট ও শাহবাগ এলাকায়।’
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চললে এবং শৃঙ্খলা মেনে গাড়ি চালালে অনেক সময় যানজট কম হয়। রাস্তায় বিশৃঙ্খল ও এলোমেলোভাবে গাড়ি চালালে, যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে রাখলে, যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী উঠানোর জন্যই যানজট বৃদ্ধি পায়। সে জন্য আমাদের মাইন্ডসেট করতে হবে।’
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘ঢাকা সিটির অনেক জায়গায় উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে, ফলে সে কারণেও যানজট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর এলাকায় রাস্তার কাজের জন্য সম্প্রতি সময়ে বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে যানজট কমিয়ে আনতে হলে শুধু ট্রাফিক পুলিশ কিছুই করতে পারবে না। সেজন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যানজট নিরসনে স্কুলের বাচ্চাদের যাতায়াতের জন্য স্কুলবাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে স্কুলে আসা যাবেনা। স্কুলে যাতায়াতের জন্য ঢাকা উত্তর সিটির ব্যবস্থাপনায় স্কুলবাস চালু করা হবে। এখন পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুলবাস সেবা চালু হবে। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক স্কুলে একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়, এরকম অসংখ্য গাড়ি রাস্তায় চলাচল করে। স্কুলবাস চালু হলে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার অনেক কমে যাবে। ছেলে-মেয়েরা স্কুল বাসে একসঙ্গে যাওয়া-আসা করলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে এবং সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতে পারলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার প্রবণতা কমবে। নগরীর যানজট কমাতে এটি অনেক সহায়ক হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘যানজট নিরসনে আমরা সমন্বিত পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিভিন্ন রাস্তায় চলমান উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বর্তমানে একটু বেশি যানজট হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দুই সিটি মিলে উদ্যোগ নিয়েছি একটি কোম্পানির অধীনে গণপরিবহন নিয়ে আসার। তাহলে রাস্তায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ কমে আসবে।’ এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’