পৃথিবীতে বাঙালির পরিচয় সুদৃঢ় করছে বাংলা ভাষা : মোস্তাফা জব্বার
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘পৃথিবীতে বাঙালির পরিচয় সুদৃঢ় করছে বাংলা ভাষা। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে বলেই বাংলাদেশ এখন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের রাজধানী। বাংলা এখন পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মাতৃভাষা।’
আজ রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি মিলনায়তনে ড. দীনেশচন্দ্র সেন গবেষণা পরিষদ, ঢাকা ও আচার্য দীনেশচন্দ্র রিসার্স সোসাইটি ভারতের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দীনেশচন্দ্র স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বাংলার প্রাচীন লোকসাহিত্য ও লোক সংস্কৃতি বিকাশে দীনেশচন্দ্র সেনের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলার লোকায়ত সাহিত্য, পুঁথি নিয়ে যে গবেষণার রাস্তা দীনেশচন্দ্র সেন দেখিয়ে গিয়েছিলেন, তা আজও বহু গবেষককে প্রেরণা যোগায়। গ্রামের পিছিয়ে থাকা নিরক্ষর মানুষদের ভেতরেও সাহিত্যের যে ধারা বয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলার মূল ধারার সাহিত্যের পরিচয় ঘটান তিনি।’
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার গারো পাহাড়ের পাদদেশে দুর্গম হাওর অঞ্চলের প্রাচীন লোকগাঁথা সংগ্রহে দীনেশচন্দ্র সেনের অবদান তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিশেষ করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে প্রবাহিত হাওরাঞ্চলের প্রাচীন জীবন গাঁথা মৈমনসিংহ গীতকায় উঠে এসেছে। এটার যেমন সাহিত্য মূল্য আছে তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে রয়েছে এর নিবিঢ় সম্পর্ক।’
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার এই উদ্ভাবক বলেন, ‘দীনেশচন্দ্র সেন বাংলার প্রাচীন লোক সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে বাঙালিকে গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস বিশ্ব সাহিত্যে স্থান করে দিয়ে বাঙালির মেধা, সৃজনশীলতা ও শৌয্য-বীর্যকে চিনিয়েছেন। আমরা এই দেশের মানুষ দীনেশচন্দ্রের উত্তরাধিকারী হিসেবে ধন্য।’
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, দীনেশচন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী দেবকন্যা সেন, ভারতের বিশিষ্ট সাহিত্যিক পার্থসারথী ঝা, চকরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক কনক বরণ বড়ুয়া, বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর এর প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সিলেট এর ডিন অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ গীতিকা তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা প্রকাশের উদ্যোগ, বিজয় বাংলা সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যার উদ্ভাবনসহ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্স সোসাইটি, ভারত এ স্বর্ণপদক প্রদান করে। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এবং দীনেশচন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী দেবকন্যা সেন এই পদক মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অধ্যাপক কনকবরণ বড়ুয়াকেও দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী পদক গ্রহণের পর তার প্রতিক্রিয়ায় দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি পদককে তাঁর জন্য অত্যন্ত গৌরবের আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্স সোসাইটি, ভারত আমাকে স্বর্ণপদক প্রদান করে ধন্য করেছে। আপনাদের দেওয়া এই পদক বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছে। গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এই পদক আমি গ্রহণ করছি। এই পদক প্রদানের জন্য আমার সরকার এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’