ইউএনওর চিঠি জাল করে ছাত্রলীগনেতার লিখিত মুচলেকা
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদের চিঠি জাল করার প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় তিনি দোষ স্বীকার করে লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও। এ ঘটনায় কোটালীপাড়ায় বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের জন্য গত ১০ এপ্রিল ফরিদপুর বিভাগীয় সামাজিক বন কর্মকর্তাকে কোটালীপাড়া-রাজৈর সড়কের (রাধাগঞ্জ-ফুলগাছা পর্যন্ত) দুই পাশে গাছ কাটার জন্য কোটালীপাড়ার ইউএনও একটি চিঠি দেন। যা গোপালগঞ্জ জেলা সড়ক বিভাগের আওতাধীন। সেই চিঠি কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সুকৌশলে সংগ্রহ করেন। পরে “ফরিদপুর বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা’র স্থলে ‘জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ’ বসিয়ে একটি জাল চিঠি তৈরি করেন। চিঠিটি গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজহারুল ইসলাম পেয়ে ইউএনওর কাছে মৌখিকভাবে জানতে চান। তখন ইউএনও চিঠিটি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাননি বলে উপপরিচালকে জানান।
পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের নির্দেশে ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ তদন্ত শুরু করেন। এরপর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটনের চিঠি জাল করার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এরপর ছোটন চিঠি জালের দায় স্বীকার করে ইউএনওর কাছে লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছোটন চিঠি জাল করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। তাই আমি দোষ স্বীকার করে ই্উএনও স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিয়েছি।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের এক সিনিয়র নেতা জানান, ছোটন তাঁর পদ-পদবি ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তিনি অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে তাঁর অপকর্মের জন্য ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা এনটিভির অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘রাজৈর-কোটালীপাড়া সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ করতে কোটালীপাড়া অংশের গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কাটার জন্য ফরিদপুর সামাজিক বনবিভাগ থেকে ২০১৭ সালে ৭১ লাখ ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ওই গাছগুলো টেন্ডার দিতে হলে মূল্য বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমার দপ্তর থেকে ফরিদপুর সামাজিক বনবিভাগ কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি চৌধুরী সেলিম আহমেদ ছোটন ওই চিঠিটি জাল করে গাছের টেন্ডারটি নিজে ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে দেন। চিঠিটি জাল প্রমাণিত হওয়ার পর ছোটন লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তার এই মুচলেকার কপিসহ আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’
তবে এই চিঠিটি কীভাবে ছোটন সংগ্রহ করেছেন সে বিষয়ে বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ইউএনও ফেরদৌস ওয়াহিদ।