মোখার প্রভাবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে বইছে ঝড়ো হাওয়া
কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সকাল নয়টা থেকে এখানে প্রবল বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আজ রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ মিয়ানমারের সিটুয়ের কাছে দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। আজ সকাল ৯টার দিকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ রোববার (১৪ মে) বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ মিয়ানমারের সিটুয়ের নিকট দিয়ে কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, মধ্যরাত থেকে হালকা বাতাস ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সকাল নয়টার পর থেকে দ্বীপের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। একই সাথে প্রবল বৃষ্টিও হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে, তবে জোয়ারের পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। দ্বীপের প্রায় সাত হাজার বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। এখানে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও ৩৭টি হোটেল, রিসোর্ট ও বহুতল ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সবাজার জেলায় ৭শ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৭ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১০ হাজার গবাদি পশুকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় গ্রহণ করছেন তাদের খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। জেলার উপকূলীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট এর ৮,৬০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। তারা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করছে। তিনি জানান- ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের আশংকাও রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। জেলায় ৯৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান আরও জানান, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা ও সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ হিসাবে ১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৪০ মেট্রিক টন চাল, ৭ মেট্রিক টন শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুত রাখা হয়েছে।
এদিকে নৌবাহিনীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ২১টি জাহাজ, হেলিকপ্টার ও পেট্রেল এয়ারক্রাফট।
অপরদিকে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের টেকনাফ অঞ্চল থেকে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমারের সিটুই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ রোববার (১৪ মে) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীতে আবহাওয়া ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান এ তথ্য জানান।
আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি আজ (রোববার) দুপুর ১২টা নাগাদ স্থলভাগে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করবে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি টেকনাফ থেকে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিয়ে অতিক্রম করছে। সেটি মিয়ানমারের সিটুই অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করায় বাংলাদেশের ঝুঁকির পরিমাণ, বিশেষ করে কক্সবাজার, টেকনাফ অঞ্চলে ঝুঁকি অনেকটাই কম। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে মিয়ানমারের সিটুইয়ে। আমাদের অংশে ঝুঁকি অনেকটা কমে এসেছে।’