মেলেনি আমদানির অনুমতি, ওপারেই গুদামজাত হচ্ছে পেঁয়াজ
মেলেনি ভারত থেকে আমদানির অনুমতি, তাই ওপারেই পেঁয়াজ গুদামজাত করছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। দেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে—এমন আশার খবরে ভারতের ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানির উদ্দেশে অন্তত ১৫-১৬ ট্রাক পেঁয়াজ সীমান্তের ওপারে প্রস্তুত রাখেন। পরে বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে পেঁয়াজ বাঁচাতে ওপারেই করা হচ্ছে মজুদ। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হিলি বন্দরে আজ সোমবার (২২ মে) কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা কমে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ।
বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, আমদানির অনুমতি (আইপি) না থাকায় গত দুই মাস আট দিন ধরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজ আসছে না। এই অবস্থায় বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের শূন্যতায় গত এক মাস ধরে বাড়তে থাকে দেশি পেঁয়াজের দাম, যা গতকাল রোববার ৮০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়।
যোগাযোগ করা হলে ভারতের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী পাপ্পু আগরওয়াল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দামে অস্থিতরতা চলছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে দাম স্বাভাবিক রাখতে চাইছে বলে জেনেছিলাম। তাই দু-এক দিনের মধ্যে রপ্তানি হতে পারে ভেবে আমরা আগে থেকে ১৫-১৬টি ট্রাকে পেঁয়াজ লোড দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আজ সোমবার জানতে পারলাম, আরও কয়েকদিন পর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। ফলে আজ বিকেলের দিকে ট্রাক থেকে পেঁয়াজ খালাস করে গুদামে রেখে ফ্যানের বাতাসে রাখা হয়েছে। নতুবা গরমে নষ্ট হয়ে যাবে।’
ভারতের আরেক ব্যবসায়ী পান্না এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। বিভিন্ন গুদামে ৫০০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজের মজুদ আছে। যখনই বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানি করতে পারব। আমরা অপেক্ষা করছিলাম, আজ হয়তো রপ্তানি করতে পারব। সেজন্য গত তিন দিন আগে ১৫-১৬ ট্রাক পেঁয়াজ এনে বন্দরের পার্কিংয়ে রাখা হয়েছিল।’
বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম ও মোবারক হোসেন বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে আমদানির জন্য সীমান্তের ওপারে পাঁচ ট্রাক পেঁয়াজ লোড করে রাখা হয়েছিল। আশায় ছিলাম, দু-এক দিনের মধ্যে আমদানির অনুমতি মিলবে, কিন্তু আমদানিতে কোনো সুখবর না থাকায় সেই পেঁয়াজ আজ সোমবার বিকেলের দিকে খালাস করে সেখানকার গুদামে রাখা হয়েছে। এই কয়েক দিন লোড অবস্থায় থাকায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। এখনও আমরা অপেক্ষায় আছি। সরকার আমদানির অনুমতি দিলেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।’ ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এলে দাম অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ফেরদৌস ও শাহাবুল জানান, গতকাল রোববার কৃষিমন্ত্রী পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানি করা হবে বলে জানান। তাঁর এই বক্তব্য শুনে পাইকারি ও মজুদদাররা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমিয়ে দেন। ফলে গতকাল রোববার বিকেলের পর থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। আজ সোমবার সকাল থেকে কেজিতে অন্তত পাইকারিতে আট থেকে ১০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতা আলমগীর ও মঈনুল বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর ২৪ ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা কমেছে। এই একই পেঁয়াজ গতকাল রোববার সকালেও আমরা ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ সেই পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকার মতো কমেছে। ভারত থেকে আমদানি করা হলে পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকার নিচে চলে আসবে।’
আজ সোমবার হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির জন্য এখনও পর্যন্ত খামারবাড়ী থেকে অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু করা হয়নি। আইপি ইস্যু করা হলে আমাদের সার্ভারে আপলোড করা হবে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি পেলে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন।’