১৪ বছর নির্বাচন নেই, ইউপি কার্যালয়ে তালা দিল জনতা
মামলা জটিলতার কারণে ১৪ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন না হওয়ার প্রতিবাদে এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
আজ বুধবার বড়বাইশদিয়া ইউপি সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এলাকার কয়েকশ লোক মিছিল করে ইউপি কার্যালয়ে আসে। তারা আমাকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন ইউপি কার্যালয়ের চারটি কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
স্থানীয়রা জানায়, ২০০২ সালে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ৯ কিলেমিটার দূরে অবস্থিত ওই ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে পৃথক আরেকটি ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।
চরগঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মো. সোনা মিয়া ওই বছরের অক্টোবরে ইউনিয়ন পৃথকীকরণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলার আদেশে উচ্চ আদালত ইউনিয়ন পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। ২০০৮ সালের জুন মাসে আদালত সোনা মিয়ার করা মামলাটি খারিজ করে দেন।
কিন্তু এরপর ২০০৯ সালের মার্চ মাসে গাববুনিয়া গ্রামের মো. কলিম খান উচ্চ আদালতে আরেকটি মামলা করেন। পরে এলাকাবাসীর চাপে তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। ২০১১ সালে সারা দেশে ইউপি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে ওই বছরের মার্চে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে মৌডুবি নামে আলাদা একটি ইউনিয়ন গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এর কয়েকদিন পরই প্রকাশিত গেজেটের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করেন গাববুনিয়া গ্রামের আব্বাস হাওলাদার। এ মামলার আদেশে মৌডুবি ইউনিয়ন গঠনসংক্রান্ত গেজেট ও বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করেন আদালত।
পরে এ মামলাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আব্বাস হাওলাদারের মামলাটি প্রত্যাহার করার কিছুদিন পরই বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবু হাসানাত আব্দুল্লাহর ভাতিজা গাববুনিয়া গ্রামের মো. শামীম হাওলাদার উচ্চ আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলার আদেশে আদালত মৌডুবি ইউনিয়ন গঠনসংক্রান্ত গেজেট ও বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করেন।
তক্তাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহ আলম বলেন, এ ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাহানা চলছে। এতে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। তারা সম্মিলিতভাবে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বন্ধ করে রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বড়বাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আদালতের আদেশের ওপর কারো হাত নেই। আমি কাউকে দিয়ে মামলা করাইনি। বর্তমানে আমি এলাকার বাইরে আছি। ইউপি কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।’
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল ইসলাম লিটু বলেন, বড়বাইশদিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবু হাসানাত আব্দুল্লাহ চেয়ারম্যান হিসেবে টিকে থাকার জন্য এক যুগের বেশি সময় ধরে তাঁর লোকজন দিয়ে উচ্চ আদালতে একের পর এক মামলা করিয়ে ওই ইউনিয়নের নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মো. আলিমউল্লাহ বলেন, ‘মামলাজনিত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বড়বাইশদিয়ায় নির্বাচন না হওয়ায় এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা দিয়ে দিয়েছে।