গাজীপুরে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি
গাজীপুরে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ শেখ বঙ্গবন্ধু মুজিব ফিল্ম সিটি। এখানে থাকবে শুটিং স্পট, ফ্লোর, যন্ত্রপাতি ও স্টুডিও। এর মাধ্যমে উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বাসসকে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মিত হবে। এতে চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদের সিনেমা হলে যাওয়ার আগ্রহ বাড়বে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি নির্মাণে প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (দক্ষিণ বাগবেড় মৌজা) এবং কালিয়াকৈর উপজেলায় (হরিরাউৎপুলকার মৌজা) এটি নির্মিত হবে। দর্শকদের নিকট চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ সৃষ্টিকরণ, চলচ্চিত্র শিল্পকে সুদৃঢ় করা, এফডিসির রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফিল্ম সিটি নির্মাণের লক্ষ্যে শুটিং স্পট ও ফ্লোর নির্মাণ, শুটিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও স্থাপন, শিল্পী-কলাকুশলী এবং পর্যটকদের জন্য আবাসন সুবিধাও থাকবে। ফিল্ম সিটিতে আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ইকোপার্ক ও ল্যান্ডস্কেপিংসহ থ্রিডি ও সেভেন ডি থিয়েটার এবং ফোর কে রেজুলেশনের সিনেপ্লেক্স থিয়েটার নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ৩২০০ বর্গমিটার শুটিং স্টুডিও বা ফ্লোর নির্মাণ করা হবে। ৫০ হাজার বর্গমিটার এন্ট্রি রোড (বাংলাদেশ বেতার) নির্মিত হবে। ক্যাবল কার, চার সেট মাস্টার প্রাইম লেন্স ও চারটি ডিজিটাল মুভি ক্যামেরা ক্রয় করা হবে। শুটিংয়ের জন্য প্রকল্প এলাকায় একটি ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এসবের জন্য ৫২ শতাংশ ভূমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, যার সঙ্গে প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
একনেকের অনুমোদন চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শুটিং স্পট, ফ্লোর, যন্ত্রপাতি ও স্টুডিও ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এমন পরিস্থিতিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি (পর্যায়-২)’ শীর্ষক প্রকল্পটি আগামী ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিত্র পরিচালক কাজী হায়াত বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে জেনে ভালো লাগছে। ভালো লোকেশন আর ভালো স্পটের জন্য আমাদের এখন দেশের বাইরে যেতে হয়। এতে ব্যয় বাড়ে, দেশি অর্থ বিদেশে চলে যায়।
এ প্রসঙ্গে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র প্রযোজক ও চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রকল্পটি দেশের চলচ্চিত্রের জন্য আশীর্বাদ। চলচ্চিত্রশিল্পীরা সরকারের কাছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শুটিং স্পট ও ফ্লোর নির্মাণ, শুটিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও স্থাপন এবং শিল্পী-কলাকুশলী এবং পর্যটকদের জন্য আবাসন সুবিধাসহ এ ধরনের একটি ফিল্ম সিটি নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি।