জাতীয় শোক দিবসে সাঈদীর জন্য দোয়া, ইমামসহ দুজন কারাগারে!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জামায়াতনেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে দোয়া করায় ইমামসহ দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) নওগাঁ শহরের তাজের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, গতকাল জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্ট শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় শহরের তাজের মোড় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়।
নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল জন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মোনাজত শুরু হয়। মোনাজাত পরিচালনা করছিলেন তাজের মোড় বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন (৪০)। মোনাজাতের একপর্যায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন ওই ইমাম। ওই সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা নিষেধ করলেও তিনি তাঁর মৃত্যুতে দোয়া চালিয়ে যান। এরপর ওই ইমামকে শহীদ মিনারের পাশে নিয়ে জেরা করেন আওয়ামী লীগনেতারা। ইমাম তাদের জানান, তাজের মোড়ের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান (৬০) তাঁকে এই অনুষ্ঠানে সাঈদীর মৃত্যুতে দোয়া পাঠের জন্য বলেছেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই ইমাম ও ব্যবসায়ীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
সদর থানা পুলিশ তাঁদের দুজনকে নাশকতার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও জল্পনা-কল্পনা চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষান বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম না। পৌর আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা ওই অনুষ্ঠান করেছে তাও জানি না। এখানে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে তাঁর দায়ভার তাঁদেরই নিতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী সাঈদের জন্য দোয়া এটা খুবই লজ্জার। ওই প্রোগ্রামে আমি এমপির পাশেই ছিলাম। হুজুর যখন মোনাজাতে সাঈদীর জন্য দোয়া করা শুরু করেন তখন সঙ্গে সঙ্গে আমিসহ অন্যরা প্রতিবাদ করি। পরে পুলিশ এসে ওই ইমাম ও আরেকজনকে ধরে নিয়ে যায়। এর দায়ভার অনুষ্ঠান আয়োজকদেরও নিতে হবে।’
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান মুঠোফোনে বলেন, ‘মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অনুষ্ঠানে মোনাজাত বিষয়ে নয়, অন্য একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
আজ বুধবার দুপুরে আবারও বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, পাঁচ-ছয় মাস আগে সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছিল। সেই মামলায় ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন ও হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান।
এ বিষয়ে আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জাতীয় শোক দিবসে সাঈদীর জন্য দোয়ার অভিযোগে নয়, পুলিশের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।