পাঁচ মেয়ের বাধায় দুদিন পড়ে থাকল বাবার মরদেহ, ওসির হস্তক্ষেপে দাফন
খুলনা জেলার পাইকগাছায় পাঁচ মেয়েসহ নিজ স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে ছেলের নামে সব সম্পত্তি লিখে দেওয়ার অভিযোগে মৃত্যুর পর বাবার মরদেহ দাফন আটকে দেন মেয়েরা। দুদিন পরে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশের হস্তক্ষেপে মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি লিখে দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে মরদেহ বাড়ির উঠানে ফেলে রেখেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যায় ছেলে। অবশেষ পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হস্তক্ষেপে মরদেটি দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার গদাইপুরের ঘোষাল এলাকার শওকত গাজী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ভোরে খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। পরে ওইদিন সকাল ৮টায় তার মরদেহটি বাড়িতে নেওয়া হয়। তিনি পাঁচ মেয়ে, এক ছেলেসহ স্ত্রীকে রেখে যান। তবে তিনি অসুস্থ হলে ছেলে মামুন চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে কৌশলে সব সম্পত্তি লিখিয়ে নেন। দাফনের জন্য মরদেহ গোসল করাতে নিলে শওকত গাজীর হাতের আঙুলে কালির ছাপ দেখা যায়। তারপর সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার ঘটনা আঁচ করতে পারেন অপর পাঁচ মেয়ে। পরে বাবার মরদেহ দাফনে বাধা দেন তারা। স্থানীয়রাও শওকত গাজীর জানাজাসহ মরদেহ দাফন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। এতে মঙ্গলবার থেকে দুদিন তার মরদেহ বাড়ির উঠানেই পড়েছিল। পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় মামুন বাবার মরদেহ ফেলে রেখেই বাড়ি থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যান। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে পাইকগাছা থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে শওকত গাজীর মরদেহ দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে মৃত শওকত গাজীর মেয়ে লাবনী আক্তারসহ ভুক্তভোগীরা বলেন, বাবার অসুস্থতার সুযোগে চিকিৎসার নামে তাদের ভাই মামুন কাউকে কিছু না জানিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে। তাই তারা পিতার মরদেহ দাফনে বাধা দেন।
স্থানীয় ঘোষাল জামে মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন বলেন, ‘শওকত গাজীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মঙ্গলবার বাদ জোহর জানাজার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে মৃতের পাঁচ মেয়ে এসে তাদেরকে জমির হক বঞ্চিত করায় জানাজা এবং মরদেহ দাফনে বাধা দেয়। ফলে মুসল্লিসহ গ্রামবাসী জানাজা নামাজ না পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।’
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্পত্তির হক বঞ্চিত করায় বাবার মরদেহ দাফনে বাধা দেন মেয়েরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হক বঞ্চিত মেয়েদেরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ। মেয়েরা চাইলে তাদেরকে সার্বিক আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পরে থানা পুলিশ, ইমাম বেলাল হোসেন, মাওলানা আহমদ আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মৃতের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’