নওগাঁয় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি, বন্ধ হয়নি স্কুল
মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে নওগাঁতে গত এক সপ্তাহ ধরে দিনের তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। তীব্র ঠান্ডায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতে শহর ও গ্রামের অধিকাংশ স্কুলে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। আজ রোববার (২১ জানুয়ারি) তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও জেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা ছিল।
আজ রোববার সকাল ৬টা ও ৯টায় নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। গতকাল শনিবার নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
আজ সকালে নওগাঁ শহরের কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ পৌর এলাকার মধ্যে অবস্থিত সবকয়টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রয়েছে। তবে স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল কম।
নওগাঁ কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক হাসমত আলী বলেন, ‘গত মঙ্গলবার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে একবার জানানো হয়েছিল বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হবে। তবে ওই নির্দেশনা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবারও জানানো হয়, বিদ্যালয় খোলা থাকবে। বিদ্যালয় খোলা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে না। তীব্র শীতের কারণে অনেক অভিভাবকই আমাদেরকে স্কুল বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পেলে স্কুল তো বন্ধ রাখা যায় না।’
নওগাঁ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুর রহমান বলেন, ‘শীতের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুবই কম। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকায় গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে স্কুল বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু আজকে স্কুল খোলা আছে। অনেক অভিভাবক আমাদেরকে বলছেন, ঠান্ডায় স্কুলে আসার কারণে তাদের শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্কুল বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করছেন তারা।’
নওরীন আখতার নামে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল খোলা থাকলে সে কিছুতেই বাড়ি থাকতে চায় না। আমরা স্কুলে যেতে বারণ করলে সে স্কুলে আসার জন্য জেদ করে। বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যেও তাকে স্কুলে আনতে হয়। কনকনে ঠান্ডায় স্কুলে যাতায়াত করতে সর্দি-জ্বর প্রায় লেগেই আছে।’
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৪ জন শিশু ভর্তি ছিল। গত কয়েক দিনে সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে কোনো কোনো বেডে দুজন শিশুকে রাখা হয়েছে। বেডে জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী ওয়ার্ড ও করিডরের মেঝেতে জায়গা দিতে হয়েছে।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ড. ফরিদ হোসেন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিদ্যালয় বন্ধ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘তাপমাত্রা কোনো দিন কমছে, আবার কোনো দিন বাড়ছে। এ কারণে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। গত মঙ্গলবার মাউশি থেকে নির্দেশনা আসে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকলে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে। এই ঘোষণা আসার পর গত বুধবার জেলার তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। পরদিন বৃহস্পতিবার আবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার আবার তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির ওপরে ছিল। গতকাল শনিবার আবার তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে। আজ আরও কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি। এখন হুট করে তো আর স্কুল বন্ধ দেওয়া যায় না। স্কুল বন্ধ করতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তারপর সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা যাবে।’