জি এম কাদের-আনিসুল ইসলাম মাহমুদের প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও দলটির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতার স্বীকৃতি দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ নোটিশটি পাঠান।
অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ জানান, বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের উদ্যোগ নিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়েছে নোটিশে। অন্যথায় এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের রিট আবেদন করা হবে।
নোটিশে বলা হয়, ‘জাতীয় পার্টির ১১ জন সংসদ সদস্য থেকে কোন আইন ও কর্তৃত্ব বলে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় বেতন ভাতা দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা নিয়োগ দিলেন, তা জানতে চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ করা হলো। এ নিয়োগের ফলে সরকারের গাড়ি বাড়ি অর্থ অপচয় হয়। জাতীয় পার্টি ১০ শতাংশ আসন লাভ করেনি। ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি আসনে সংসদ সদস্য থাকলে বিরোধী দলের নেতা হবেন। এমন আইন থাকা অতি জরুরি, নচেৎ পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘কতজন সংসদ সদস্য থাকলে বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারবেন সে বিষয়ে সংসদে আইন করতে হবে। আইন না করা পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ ভারতের মতো খালি থাকবে।’
নোটিশ বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ৭৫ (২) অনুযায়ী কমপক্ষে ৬০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত না হলে সংসদে বৈঠক কোরাম হবে না। বিরোধী দলের নেতা নির্বাচনের জন্যে কতজন সদস্য থাকলে অনুরূপ কোরাম হবে তা সংবিধানে নেই বা কতজন সংসদ সদস্য থাকলে বিরোধী দলের নেতা ও উপনেতা মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদা বেতন ভাতাসহ নিয়োগ হবে তাও সংবিধানে নেই। এ ধরনের নেতা ও উপনেতা স্পিকার কোন আইনে বা কোন ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিতে পারেন সেটাও আইন ও সংবিধানে নেই।’
বলা হয়েছে, ‘১৯৭৯ সালের সরকার অধ্যাদেশ-বলে নেতা ও উপনেতা ইংরেজিতে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদার বেতন ভাতা দেওয়া হবে তাও উল্লেখ করেনি। পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের বরাত দিয়ে (রায় উল্লেখ করে) ওই অধ্যাদেশ বাতিল করে ২০২১ সালে বাংলায় বিরোধী দলীয় নেতা উপনেতা সংজ্ঞায়িত করা হয়। সাথে সাথে অনুরূপভাবে কত বেতন ভাতা পাবেন সেটিও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওই দুটি আইনের কোনটিতে স্পিকারকে বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই জাতীয় পার্টির ১১ জন সংসদ সদস্য থেকে স্পিকার কর্তৃক বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা নিয়োগ সংবিধান সম্মত হয়নি।’
নোটিশ বলা হয়, ‘ভারতের লোকসভায় ১০ শতাংশ সদস্যসহ দ্বিতীয় স্থানে না থাকলে বিরোধী দলের নেতার পদ খালি থাকে এমন আইন আছে। কিন্তু আমাদের দেশে নিয়োগেরও আইন নাই বা কত সংখ্যক এমপি থাকলে বিরোধী দলের নেতা হতে পারবে তাও উল্লেখ নেই। কতজন সংসদ সদস্য থাকলে বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারবে সে বিষয়ে সংসদে আইন করতে হবে। আইন না করা পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ ভারতের মতো খালি থাকবে।’
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী এ স্বীকৃতি দেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ-বারের মতো সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২২৩টি আসন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ৬২টি আসন। আর জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। তিনটি আসন পেয়েছে অন্য তিনটি দল থেকে। এছাড়া একটি আসনে নির্বাচন এখনও বাকি আছে।