এক দশকেও শেষ হয়নি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার তদন্ত
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১ বছর আজ। গত ১০ বছর ৭০ বার পিছিয়েছে এ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের তারিখ। হত্যাকাণ্ডের একদশকেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
নিহত ত্বকীর পরিবারের অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হওয়ায় প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ত্বকীসহ বহু খুনের আসামি আজমিরী ওসমান। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই ত্বকী হত্যার বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব বলেও দাবি ভুক্তভোগী পরিবারটির। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, র্যাব অভিযোগপত্র দাখিল করলেই বিচার কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে।
ত্বকীর জন্ম ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। হাঁটছিল সঠিক পথেই। এ লেভেল প্রথম পর্বের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পায় সে। মেধাবী এ শিক্ষার্থী ছবি আঁকা, কবিতা লেখা আর বই পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকত। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নিখোঁজ হয় ত্বকী। এর দুদিন পর ৮ মার্চ নগরীর চারারগোপ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনি খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি পুলিশ তদন্ত করলেও ত্বকীর বাবার আবেদনে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মামলাটি তদন্ত করে।
পুলিশ ও র্যাব ত্বকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে সুলতান শওকত ভ্রমর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে জানায়, আজমিরী ওসমানসহ ১১ জন ত্বকী হত্যাকণ্ডে অংশ নেয়। হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্ণেল জিয়াউল আহসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ত্বকী হত্যায় আজমিরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন জড়িত। খসড়া চার্জশিট প্রস্তুত। শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পরও এই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়নি র্যাব।
নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি এনটিভি অনলাইনকে জানান, ত্বকী দেশে বিচারহীনতার প্রতীক। ত্বকী হত্যার সঙ্গে ওসমান পরিবার জড়িত। ত্বকী হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যার হোতা আজমিরী ওসমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজমিরী ওসমানকে গ্রেপ্তার এবং হত্যার বিচার একমাত্র নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। প্রধানমন্ত্রীকে ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ জানান, ত্বকী হত্যার ১০ বছর পার হলেও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। এ পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য ৭০ বার তারিখ পিছিয়েছে।
আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। চার্জশিট না দেওয়ার কারণে দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। মামলাটি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব তদন্ত পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। আর মামলা ট্রায়ালে না আসার কারণে বিচার কাজও শুরু হচ্ছে না। আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেই বিচারকাজ দ্রুত শুরু হবে বলে জানান তিনি।