পয়লা বৈশাখে ঢাকার কাছে কোথায় যাবেন
পয়লা বৈশাখ এখন বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকোৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। পুরোনো বছরের সব গ্লানি না পাওয়ার বেদনা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন আশায় উৎসবে মেতে ওঠেন সবাই। নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও সেদিন মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে। কিন্তু ইদানীং ঢাকার যানজট, নানা নিষেধাজ্ঞা আর বিগত সময়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে অনেকে ঢাকায় পয়লা বৈশাখ উৎসবে যোগ দিতে দ্বিধাবোধ করেন অনেকে। তাদের জন্য পয়লা বৈশাখের দিন যাওয়ার জন্য কিছু জায়গা দেওয়া হলো। ওই দিন সকালে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে আসতে পারেন এসব জায়গায়।
প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁ
প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে যেতে পারেন বৈশাখী অনুষ্ঠান দেখতে। সেখানে ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যা বউমেলা নামে পরিচিত। এ মেলা ‘বটতলার মেলা’ নামেও পরিচিত। সোনারগাঁর জয়রামপুর গ্রামে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। একটি বিরাট বটগাছের নিচে এই মেলা বসে। ওদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজার জন্য এখানে সমবেত হন। বিশেষ করে কুমারী, নববধূ, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন। সন্দেশ-মিষ্টি-ধান দুর্বার সঙ্গে মৌসুমি ফলমূল নিবেদন করে ভক্তরা। পাঁঠা বলিও দেওয়া হয়।
এ ছাড়া সোনারগাঁ লোক এবং কারুশিল্প ভবনে বসে লোকজ মেলা। সেটাও ঘুরে দেখতে পারবেন। এরপর চলে যান ৫০০ বছরের পুরোনো গোয়ালদি মসজিদ দেখতে। জাদুঘরের সামনে থেকে রিকশা নিয়ে যেতে পারবেন। গোয়ালদি মসজিদ দেখা হলে পানাম সিটিতে প্রবেশ করুন। দেখুন আমাদের পূর্বপুরুষদের জৌলুসের কিছু নমুনা।
পানাম সিটি ভ্রমণ শেষ করে অটোতে চলে যেতে পারেন বৈদ্যেরবাজার মেঘনাঘাটে। আবহাওয়া ভালো হলে একটি নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরে আসুন ঘণ্টাখানেক। বিকেলের দিকে ঢাকায় ফিরে আসুন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্তান হকি স্টেডিয়ামের কাছ থেকে প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর বাস ছাড়ে। এতে উঠে নেমে যাবেন মোগড়াপাড়া। এরপর রিকশায় করে জয়রামপুর বা পানাম সিটি।
ধামরাই চড়ক মেলায়
দুর্বলচিত্তের কোনো মানুষ এ মেলায় যাবেন না। কারণ, এ মেলা অনুষ্ঠিত হয় একটি ভয়ংকর পূজাকে কেন্দ্র করে। এ পূজার নাম চড়ক পূজা। এটি অনেক এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। এ পূজায় একজন সন্ন্যাসী মহাদেবের মূর্তির সামনে স্টিলের বড় দুটি ‘বড়শি’ গেঁথে নেন নিজের শরীরে। এরপর বড় খুঁটির সঙ্গে বাঁধা দড়িতে ঝুলে মুখে বাঁশি বাজিয়ে শূন্যে ঘোরেন তিনি। একবার- দুবার নয়, ৪১ বার। তাঁদের বিশ্বাস, মহাদেব খুশি হলেই নতুন বছরে সুখ-শান্তিতে ভরে উঠবে তাঁর সংসার। এ উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানোর নিয়ম। পিঠ ছাড়াও তাঁর হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। ধামরাই পৌর এলাকার আইঙ্গন মাঠে অনুষ্ঠিত হয় পহেলা বৈশাখ বিকেলের দিকে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বা মানিকগঞ্জগামী যেকোনো বাসে উঠে ধামরাইয়ে ধূলিভিটা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাবেন। এরপর রিকশা নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যাবেন।
আড়াইহাজারের বৈশাখী মেলা এবং নদী ভ্রমণ
নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত আড়াইহাজারও হতে পারে আপনার গন্তব্য। আড়াইহাজারের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে। এখানে আঙ্গুর সাহেবের মাঠ এ বিশাল একটি মেলা বসে। গ্রামীণ বিভিন্ন পণ্যাদি আর নানা লোকজদ্রব্য নিয়ে পসরা সাজান দোকানিরা। মেলা দেখা শেষ করে অটোরিকশা নিয়ে চলে যান খাগকান্দা ঘাটে। এরপর ট্রলার নিয়ে চলে যান কাছের কোনো চরে। যাওয়ার আগে স্থানীয় কাউকে সঙ্গে নিয়ে নিন। একটু সময় পেলে গোপালদি সদাসদি ভূঁইয়াবাড়ি জমিদারবাড়ি দেখে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে অভিলাষ পরিবহনে উঠে যেতে পারবেন আড়াইহাজার। এ ছাড়া কলাবাগান থেকে মেঘলা পরিবহনে উঠে ভুলতা নেমে যাবেন। এরপর রাস্তা পার হয়ে সিএনজিতে করে আড়াইহাজার। ৩০০ ফুট দিয়ে শেয়ারড কারেও যাওয়া যায় ভুলতা। সিএনজিতেও যাওয়া যায়।
সিংগাইরের পারিল গ্রামে
ভাষাশহীদ রফিকের জন্মস্থান সিংগাইরের পারিল গ্রামও হতে পারে এবার আপনার গন্তব্য। সেদিন সকালে চলে যেতে পারেন লাঠিখেলা, বৈশাখী মেলা দেখতে। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে পারিল গ্রামে বিশাল মেলা বসে। মেলার সঙ্গে থাকে লাঠিখেলা, ঘুড়ি উৎসব, বানরের নাচ এবং আরো অনেক লোকজ খেলা। আর থাকে মেলার অত্যাবশ্যকীয় সব লোকজ পণ্য এবং মুড়ি-মুড়কি।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে হরিরামপুরগামী শুকতারা পরিবহনের বাসে উঠে বসুন। ৪০ মিনিট পর সিংগাইর বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে বকপুর স্ট্যান্ড নেমে যাবেন। এখান থেকে অটোরিকশা করে পারিল গ্রাম।
যেতে পারেন মানিকনগরের সবুজের মেলায়
মেলার ভিড়ে না যেতে চাইলে ঢাকার খুব কাছের একটা গ্রামে বেড়িয়ে আসতে পারেন। ঢাকার গাবতলী থেকে আরিচাগামী যেকোনো বাসে উঠে হেমায়েতপুর নেমে যান। এরপর শেয়ারের অটোতে করে চলে যান মানিকনগর। যাওয়ার সময় দুই পাশের সবুজে চোখ জুড়িয়ে যাবে। মানিকনগর বাজারে নেমে খাঁটি দুধের চা খেয়ে কোনো একটা গ্রামে ঢুকে পড়ুন। এরপর সবুজে নিশ্বাস নিন প্রাণভরে। চাইলে কোনো এক গৃহস্থ বাড়িতে অনুরোধ করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করুন। বিকেলে ফিরে আসুন ঢাকায়।