আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি : প্রকৌশলীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি স্থানে ৩৩ হাজার কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়ে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ বঞ্চিত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এ কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) কার্যালয়ে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শফিকুল আলম।
এদিন দায়িত্বরত ওজোপাডিকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) মো. আব্দুস সালামের উদ্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনারা ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে রিজাইন দিয়ে চলে যাবেন।’
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। জেলা শহরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
গত বুধবার সকালে রাজাপুর উপজেলা শহরে এবং রাতে ঝালকাঠি শহর ও নলছিটি শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু, বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও ৯৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত ছিলেন ঝালকাঠির কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাসিন্দারা। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শফিকুল আলমসহ স্থানীয়রা পানির তীব্র সংকটেও পড়েন। বিদ্যুতের অভাবে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। জেলা শহরের বাসিন্দারা রান্নাবান্না ও গৃহস্থালির কাজে পৌর কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না তারা।
খন্দকার শফিকুল আলম প্রকৌশলীর কাছে জানতে চান, রিমাল চলে যাওয়ার চার দিন পার হলেও কেন তিনি পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি? প্রকৌশলীকে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব কি ঘুষ খাওয়া? ঘুষ খাওয়ার জন্য কি দেশ স্বাধীন করেছি?’ তখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে প্রকৌশলীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলে যান তিনি।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শফিকুল আলম বলেন, ‘গত রোববার থেকে একটানা চারদিন অতিবাহিত হলেও আমি বিদ্যুৎ পাইনি। বুধবার রাতে শহরের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ চালু হয়েছে, তাহলে আমি কেন পেলাম না? আমি বৃদ্ধ মানুষ, এই গরমে কি বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা যায়? তারপর আবার পানিরও সংকট। কেননা বিদ্যুৎ না থাকলে পানি আসবে কেমনে। পানির জন্য তীব্র গরমে গোসল, খাবার পানি, বাথরুমের পরিচ্ছন্নতার কাজে অনেক কষ্ট করতে হয়।’
এ বিষয়ে ঝালকাঠি ওজোপাডিকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘ঝড়ে ঝালকাঠি শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ অফিসের লোকসহ স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছি। তারপরও সব স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন যাদের বিদ্যুৎ লাইন সচল করে দিতে পারব, তারা ভালো বলবে, ধন্যবাদ জানাবে। আর যাদের দিতে পারব না, তারা খারাপ বলবে। যেহেতু এই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করি, সেহেতু এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। দুই-তিন দিনের মধ্যে শহরের সব স্থানেই বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হবে।’
এ বিষয়ে জেলার ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মেরামতের জন্য দিন-রাত বিদ্যুৎ অফিসের লোকসহ ভাড়া করা লোক দিয়েও কাজ করানো হচ্ছে। এত পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে, যা খুব দ্রুত ঠিক করা সম্ভব না, সময় লাগবে। আমরা আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি জেলার সব স্থানে বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে পারব।’