সুনামগঞ্জে পানির নিচে আরও এলাকা, আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ
গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কম হলেও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। রাস্তাঘাট ডুবে বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় দিশেহারা মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়ে যাচ্ছেন। সুনামগঞ্জ পৌরশহরের বেশিরভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় সকাল থেকে মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে বের হয়েছেন।
শহরের পৌর এলাকার নূর আহমেদ মাসুম বলেন, ‘সকাল ৭টায় উকিলপাড়া সড়কে পানি ছিল না কিন্তু এখন হাঁটুপানি। আলামতে যা মনে হচ্ছে তাতে ২০২২ সালের মতো বন্যা হবে। দেশের মানুষ সুনামগঞ্জের জন্য দোয়া করেন সুনামগঞ্জের মানুষ ভালো নেই।’
শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা পিংকি জানান, ‘দুই রাত আতংকে ছিলাম, কখন বন্যা হবে তাই রাতে ঘুমাইনি, ভোর থেকে বাসায় পানি ডুকছে। আর বাসায় থাকা যাচ্ছে না তাই পরিবার নিয়ে অন্য জায়গায় যাচ্ছি। বন্যা কতটা ভয়ংকর যারা এই পরিস্থিতিতে পড়ে তারাই জানে।’
এদিকে যতই সময় যাচ্ছে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। বন্যার পানিতে পৌরশহরের সব এলাকার ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। গত দুইদিনে জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বন্যার পানিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর দুপাড় উপচে গতকাল রাত থেকে পানি পৌরশহরের বড়পাড়া, আরপিননগর, তেঘরিয়ার, নতুনপাড়া, হাছননগর সহ সব এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় শহরের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সব উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার ছাতক- সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুর মূল সড়কে পানি উঠে যাওয়া সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে।
জেলার সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর উপজেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে পাহাড়ি ঢলে রাস্তাঘাট ডুবে বাড়িঘরে পানি ঢুকে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। একই ভাবে ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর, দিরাই শাল্লা, জগন্নাথপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে সুনামগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত না হলেও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মানুষকে বন্যা পরিস্থিতিতে নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ বন্যার সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, জেলার সব উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।