বাড্ডায় শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ
রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটে যায়। তবে, শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তারপর দুপুর সোয়া ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে পুলিশ ও কোটা সংস্কারপন্থিদের মধ্যে।
কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পর শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মেরুল বাড্ডা, আফতাবনগর ও হাতিরঝিলের দিকে ছুটে যায়। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা পুনরায় একত্রিত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য ওই এলাকায় অবস্থান করছে।
জানা যায়, রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। তবে সংখ্যাটা তারা বলতে পারেনি।
সংঘর্ষের সত্যতা নিশ্চিত করে বাড্ডা পুলিশের ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হক আব্বাসী বলেন, পুলিশ এবং ছাত্রদের সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভূক্ত সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত সাতজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন।
পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না হয় সেজন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলেও সেই সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।